ভারতীয় ক্রিকেটে বড় ধাক্কা! রোহিত শর্মার পর আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট থেকে আকস্মিক অবসরের ঘোষণা দিলেন সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কোহলির এই সিদ্ধান্ত ক্রিকেটবিশ্বে রীতিমতো ঝড় তুলেছে, কারণ এর আগে এমন কোনো ইঙ্গিত দেননি এই তারকা ব্যাটসম্যান।
ভারতীয় গণমাধ্যমের একাংশের দাবি, অধিনায়কত্বের প্রশ্নে বোর্ডের (বিসিসিআই) সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরেই কোহলি এই অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বোর্ডের পক্ষ থেকে তার চাহিদা অনুযায়ী নেতৃত্ব না দেওয়ায় তিনি হতাশ ছিলেন বলে জানা যায়।
গত ৭ মে রোহিত শর্মার টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের পর থেকেই কোহলির ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। শোনা গিয়েছিল, বিসিসিআই কোহলিকে অবসর পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানালেও তিনি তা নাকচ করে দেন। এবং ১২ মে নিজের অবসরের কথা ঘোষণা করেন।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে আরও জানা যায়, অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝপথে কোহলিকে আবারও অধিনায়ক করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। অ্যাডিলেডে দ্বিতীয় টেস্টে হারের পর নাকি রোহিতকে সরিয়ে কোহলিকে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি।
ওই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে যায় রোহিত শর্মার দল। এরপর আসন্ন ইংল্যান্ড সিরিজকে কেন্দ্র করে নতুন অধিনায়ক নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করে বিসিসিআই।
একাধিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, এই দৌড়ে শুভমান গিল এগিয়ে রয়েছেন। অর্থাৎ, আবারও নেতৃত্বের আলোচনায় নেই কোহলি। মনে করা হচ্ছে, এই বিষয়টিই কোহলিকে অবসরের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে।
কোহলির আকস্মিক এই সিদ্ধান্তে হতবাক তার রঞ্জি দলের কোচ শরণদীপ সিংও। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে দীর্ঘ সময় পর কোহলি যখন রঞ্জি ট্রফিতে লাল বলের ফরম্যাটে খেলতে নেমেছিলেন, তখন তার মধ্যে টেস্ট থেকে অবসরের কোনো ভাবনা ছিল না বলেই জানিয়েছেন দিল্লির এই কোচ।
আইপিএলের সম্প্রচারকারী চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শরণদীপ সিং বলেন, ‘কোনো ইঙ্গিত পাইনি। অন্য কারো কাছেও শুনিনি। কিছুদিন আগে ওর সঙ্গে মেসেজে কথা হচ্ছিল। তখনো বুঝতে পারিনি ও অবসর নেওয়ার কথা ভাবছে।
আইপিএলে ও অসাধারণ ফর্মে রয়েছে। সে বলেছিল টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে ভারত ‘এ’ দলের হয়ে দুটো ম্যাচ খেলবে। হঠাৎ করে এই খবর শুনছি।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘ফর্ম নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না। অস্ট্রেলিয়ায় শতরান করেছিল। তাতেও তৃপ্ত হয়নি। রঞ্জি ট্রফি চলার সময় আমাকে বলেছিল ইংল্যান্ডে গিয়ে ৩-৪টা শতরান করতে চায়। কারণ সে-ই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।’
যদিও পরিসংখ্যান বলছে, লাল বলে কোহলির সাম্প্রতিক ফর্ম খুব একটা ভালো ছিল না। গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে খেলা পাঁচ টেস্টে তার ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ২৩.৭৫। আটটি ইনিংসের মধ্যে সাতটিতেই তিনি উইকেটের পেছনে ক্যাচ আউট হয়েছেন।
২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল বিরাট কোহলির। একই বছর অস্ট্রেলিয়া সফরে অ্যাডিলেডে ১১৬ রানের একটি অনবদ্য ইনিংস খেলে নিজের প্রথম টেস্ট শতরানটি করেছিলেন তিনি।
১২৩টি টেস্টে কোহলির সংগ্রহ ৯,২৩০ রান, যেখানে তার ব্যাটিং গড় ৪৬.৮৫। টেস্ট ক্রিকেটে ৩০টি শতরান এবং ৩১টি অর্ধশতরান রয়েছে তার ঝুলিতে।
আপনার মতামত লিখুন :