লন্ডনের ঐতিহাসিক লর্ডস মাঠ যেন এক মহাকাব্যিক যুদ্ধের সাক্ষী হয়ে থাকল। ইংল্যান্ড ও ভারতের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচের শেষ দিনে লড়াই কেবল ব্যাট-বলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না—তা যেন রূপ নিয়েছিল এক মানসিক, শারীরিক এবং কৌশলগত টানাপোড়েনে।
এমন এক উত্তেজনাপূর্ণ দিনে লর্ডসের নর্থ গেটের ভেতরে হ্যান্ড-রাইটেন একটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘In affectionate remembrance of Bazball, which died at Lord’s on 10 July, 2025. RIP.’ এমসিসি’র টাইয়ের রঙে আঁকা সেই লেখাটি হয়তো কোনো ভারতীয় দর্শকের ছিল, যিনি হয়তো পাঁচ দিনের টিকিটের শর্ত ভালো করে পড়েননি।
কিন্তু লর্ডসের নিয়মরক্ষীরা সেটিকে ফেলে না দিয়ে রীতিমতো একটি ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ টিকিট লাগিয়ে রেখেছিলেন—ভদ্রতা ও ঐতিহ্যের নামে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই ম্যাচে শেষদিন যেন রূপ নেয় একটি নাটকীয় ব্যাখ্যায়—মর্যাদার লড়াই, ক্লান্তির প্রতিরোধ এবং পেশাদার ক্রিকেটের কঠিন বাস্তবতা।
শেষ দিনে যখন ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেন বেন স্টোকস বাউন্সারের বৃষ্টিতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরছিলেন, তখন রাবিন্দ্র জাদেজা যেন একা প্রতিরোধের দুর্গ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
তিনি রান নিতে অস্বীকার করছিলেন, কেবল পেছনের ব্যাটসম্যানদের স্টোকসের মুখোমুখি হওয়া থেকে বাঁচাতে। এমন দুর্দান্ত প্রতিরোধ যদিও জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না, তবু জাদেজার ইনিংস ছিল হার না মানা মানসিকতার প্রতীক।
স্টোকস ও জাদেজার সেই দ্বৈরথ ছিল যেন ১৮০০ শতকের পুরোনো ইংরেজি বক্সিং ম্যাচ। অসংখ্য রাউন্ড, ক্লান্তিকর ধৈর্য এবং সম্মানের খেলা।
ভারতের শুভমান গিল সেই ভুলটাই করলেন লর্ডসে শনিবার সন্ধ্যায় জ্যাক ক্রলিকে উদ্দেশ্য করে কিছু একটা বলেছেন। এর প্রতিশোধ নিতে স্টোকস যেন আগুন হয়ে উঠেন।
রবিবার মোহাম্মদ সিরাজ বেন ডাকেটকে আউট করার পর সেলিব্রেশনের সময় ধাক্কা দেন, যার জন্য তিনি জরিমানা পান। সোমবার আবার দেখা যায়, জাদেজা ও ব্রায়ডন কার্স মুখোমুখি—স্টোকসকেই তখন দুজনকে আলাদা করতে হয়।
জোফ্রা আর্চারও পিছিয়ে ছিলেন না, ঋষভ পন্থকে আউট করার পর মুখে মুখে কথা বলেও দেন।
শেষ মুহূর্তে আর্চার আবার বল হাতে ফেরেন, সিরাজকে এক ভয়ংকর বাউন্সারে কাঁধে আঘাত করেন, কিন্তু কোনো করুণা দেখান না—শুধু ফিরে যান নিজের জায়গায়।
এ যেন ছিল ‘বাজবল নয়, বাজব্রল’ উগ্র, পেশাদার, নিয়ন্ত্রণে থাকা আগ্রাসন।
শেষ উইকেট পড়ার পর যেন এক মুহূর্ত স্তব্ধতা, বিশ্বাস করা কঠিন—এই যুদ্ধের শেষ হয়েছে। তখনই তরুণ স্পিনার শোয়েব বশির উল্লাসে দৌড়ে বেড়ান, আর মাঠের প্রান্তে ক্লান্তশ্রান্ত জোফ্রা আর্চার মাটিতে পড়ে যান মুখ থুবড়ে, যুদ্ধশেষে শান্ত যোদ্ধার মতো।
বাজব্রল (Bazbrawl) কী
তাই ‘Bazball’ + ‘Brawl’ = Bazbrawl এখানে ‘Brawl’ শব্দের মানে হলো মারামারি বা সংঘর্ষ। তাই ‘Bazball’ + ‘Brawl’ = Bazbrawl মানে বাজবলের উত্তেজিত, সংঘর্ষপ্রবণ।
‘Bazbrawl’ হলো ‘Bazball’ কৌশলের অতিরঞ্জিত বা বিবর্তিত এক রূপ, যেখানে শুধু আগ্রাসী ব্যাটিং নয়, মাঠে তীব্র বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, স্লেজিং, শারীরিক সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি মুহূর্ত।
‘বাজব্রল’ এখন কেবল কৌশল নয়, বরং একটি মানসিক অবস্থাও, যেখানে প্রতিপক্ষকে মানসিক চাপে ফেলাই মূল লক্ষ্য।
মাঠের প্রতিটি বলেই ঝাঁপিয়ে পড়া, ব্যাটারদের চোখে আগুন এবং জয়ের জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়ার নামই যেন ‘বাজব্রল’।