ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

তিন বাধার মুখোমুখি আমেরিকা বিশ্বকাপ

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম
ফিফা ২০২৬ বিশ্বকাপ। ছবি- সংগৃহীত

২০২৬ বিশ্বকাপকে ঘিরে উচ্ছ্বাস থাকলেও তিনটি বড় ‘বাধার মুখোমুখি’ হবে আমেরিকা বিশ্বকাপ। চলতি ক্লাব বিশ্বকাপে ফুটবলারদের অভিজ্ঞতা উদ্বেগ বাড়িয়েছে দলগুলোর। মাঠের পারফরম্যান্স নয়, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে গরম, খেলার সময়সূচি, মাঠের চিত্র এবং যাতায়াত সমস্যা।

গ্রীষ্মকালের তীব্র গরমে খেলোয়াড়রা শুধু অসুস্থই হননি, কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফিফা দুপুর ৪টার আগে যেসব ম্যাচ নির্ধারণ করেছে, তার বেশিরভাগই খোলা মাঠে। 

চেলসির মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজ জানান, খেলার সময় মাথা ঘুরে যাচ্ছিল, মাঠেই শুয়ে পড়তে হয়েছে। এই গরমে খেলাটা প্রায় অসম্ভব। 

রিয়াল মাদ্রিদের ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ড বলেন, মাথা কাজ করছিল না, মনে হচ্ছিল শরীর জ্বলছে।

পিএসজি কোচ লুইস এনরিক বলেন, ইউরোপীয় দর্শকদের সময় মাথায় রেখে ম্যাচ নির্ধারিত হলেও মাঠে পারফর্ম করা আমাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্ব খেলোয়াড় সংগঠন ফিফপ্রো (FIFPRO) এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, বাণিজ্যিক স্বার্থের আগে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা অগ্রাধিকার পেতে হবে।

খেলার মাঠের সমস্যা 

খেলার মাঠ নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। অনেক স্টেডিয়ামে কৃত্রিম টার্ফের ওপর অস্থায়ী ঘাস বসানো হয়, যা ইউরোপীয় মানের মাঠ থেকে অনেকটাই দূরে। 

চেলসির রিস জেমস বলেন, এই মাঠগুলো শরীরের জন্য ভালো নয়। যদি উন্নত মানের মাঠে খেলা হতো, তাহলে ফুটবলের মানও উন্নত হতো।

পরিবহণ ও যাত্রা ভোগান্তি

যুক্তরাষ্ট্রে খেলোয়াড়দের এক শহর থেকে আরেক শহরে উড়োজাহাজে যেতে হচ্ছে। আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় ফ্লাইটও বিলম্বিত হয়। 

সমর্থকরাও পড়েছেন তীব্র যানজট ও রাইডশেয়ার অ্যাপে ভরসা করে বিপাকে।

হুইটনি হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়াম, লস অ্যাঞ্জেলেসের সোফাই স্টেডিয়াম এবং আটলান্টার মার্সিডিজ বেঞ্জ স্টেডিয়ামের মতো ইনডোর মাঠ থাকলেও, গ্রুপ পর্বের ১০টি দিন ও কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ফাইনালের বেশিরভাগ ম্যাচ হবে খোলা আকাশের নিচে।

বজ্রপাত ও খেলার বিলম্ব

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে বারবার বজ্রপাত ও ঝড়ের কারণে ক্লাব বিশ্বকাপের ছয়টি ম্যাচ অন্তত ৩০ মিনিট করে বিলম্বিত হয়েছে। 

চেলসি কোচ এনজো মায়ারেস্কা এক দেড় ঘণ্টার বিলম্বে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, এটা একটা রসিকতা ছাড়া কিছু নয়। এভাবে কি বিশ্বকাপ আয়োজন সম্ভব।

ফিফার প্রতিশ্রুতি ও আশঙ্কা 

ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো স্বীকার করেছেন, তাপমাত্রা অবশ্যই সমস্যা। কুলিং ব্রেক গুরুত্বপূর্ণ হবে। 

তবে ফিফপ্রো’র মতে, শুধু কুলিং ব্রেক নয়, সময়সূচি ও মাঠের মান নিশ্চিত করাও জরুরি।

২০২৬ বিশ্বকাপে ৩৯ দিনে ১০৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে, যার মধ্যে প্রতিদিনই চারটি করে ম্যাচ থাকবে। ইউরোপীয় দর্শকদের জন্য সুবিধাজনক সময় ধরে খেলার সময় নির্ধারিত হলেও, খেলোয়াড়দের জন্য তা শারীরিক ঝুঁকি তৈরি করছে।

ক্লাব বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা তাই একধরনের অ্যালার্ম বেল হিসেবে দেখা হচ্ছে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে, বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরও হয়ে উঠতে পারে খেলোয়াড়দের জন্য বিপজ্জনক এক মঞ্চ।