ক্রিকেটে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং খেলায় বৈচিত্র্য আনতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার ইবনি রেইনফোর্ড-ব্রেন্ট। প্রায় ২৪ বছর আগে ইংল্যান্ড নারী দলের ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয় তার।
নিজের সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ২০২২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘টেক হার লিড’ নামের একটি দাতব্য সংস্থা। এই সংস্থাটির মূল লক্ষ্য হলো, নারীদের ক্রিকেটে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং খেলায় তাদের ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা।
ইবনি রেইনফোর্ড-ব্রেন্ট এবং তার আরেক সতীর্থ, যিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত, ছিলেন প্রথম দুই আন্তর্জাতিক নারী ক্রিকেটার। যারা জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় পটভূমি থেকে উঠে এসেছিলেন।
একসঙ্গে বিশ্বকাপ জেতার গৌরব অর্জন করলেও, এরপর থেকে এই ধরনের পটভূমি থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেটে আসা খেলোয়াড়ের সংখ্যা হাতে গোনা, মাত্র চারজন।
এর মধ্যে দুজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রিকেটের প্রতি বিপুল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও এই সংখ্যা বিস্ময়করভাবে কম।
এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে ‘টেক হার লিড’ একটি জরিপ পরিচালনা করে। তাতে দেখা যায়, ক্রিকেটে নারীদের দৃশ্যমানতা ও বিনিয়োগ বাড়লেও, জরিপে অংশ নেওয়া ১,০০০ নারী ও কিশোরীর বেশির ভাগই মনে করেন, খেলাটির সাথে তারা নিজেদের ‘আপন’ মনে করেন না।
বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও প্রকট। তাদের খেলাধুলায় ধরে রাখতে হলে অতিরিক্ত সহায়তার প্রয়োজন বলে এই জরিপে উঠে আসে।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে ইবনি রেইনফোর্ড-ব্রেন্ট জানান, মাত্র ১২ বছর বয়সে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৫ দলে ডাক পাওয়ার পর প্রথম ক্যাম্পেই তাকে শারীরিক গঠন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হতে হয়েছিল।
সেই ঘটনা তাকে দলের অন্য খেলোয়াড়দের থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং তার মনে একাকীত্ব ও অনাগ্রহের জন্ম দেয়, যা তার মানসিকতায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছিল।
এই ধরনের অভিজ্ঞতা যেন আর কোনো তরুণ খেলোয়াড়কে প্রভাবিত করতে না পারে, সেই লক্ষ্যেই তিনি তার সংস্থা নিয়ে কাজ করে চলেছেন।
‘টেক হার লিড’ এই সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। সম্প্রতি তারা সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার, কমিউনিটি উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এবং ন্যাশনাল এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলকে নিয়ে একটি পরামর্শক প্যানেল গঠন করেছে।
এ ছাড়া, সাউথ এশিয়ান ক্রিকেট একাডেমির (SACA) সঙ্গে মিলে ১০ জন পেশাদার খেলোয়াড়কে বিশেষ সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে সংস্থাটি নারীদের জন্য রোল মডেল তৈরি, জীবন দক্ষতা কর্মশালা আয়োজন এবং খেলাধুলা ও সম্প্রচার অঙ্গনে কর্মরত নারীদের সহায়তা প্রদানের মতো কাজগুলো করে যাচ্ছে।
ইবনি রেইনফোর্ড-ব্রেন্ট আশা প্রকাশ করেন, এই প্রচেষ্টার ফলে ক্রিকেটে নারীদের অংশগ্রহণ ও বৈচিত্র্য বাড়বে এবং প্রতিটি নারী খেলোয়াড় যেন খেলাটিতে যুক্ত হওয়ার সময় সর্বোত্তম অভিজ্ঞতা পায়।