ঢাকা শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

গুডিসনের ছায়া থেকে ইতিহাসের অংশ ‘কলিন হার্ভে’

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৫, ০৩:২২ পিএম
কলিন হার্ভে। ছবি- সংগৃহীত

গুডিসন রোডে এক দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে, ভিড়ের মধ্য থেকে বাবাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন এক কিশোর কলিন হার্ভে। সেদিন তাঁর কল্পনাতেও ছিল না, একদিন সেই স্থানেই স্থাপন হবে তাঁর নিজস্ব একটি মূর্তি—দ্য হোলি ট্রিনিটি’র অংশ হিসেবে। 

আজ ৮০ বছর বয়সে, গুডিসনের বাইরের সেই ব্রোঞ্জ মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে হার্ভে যেন এক দীর্ঘ, গৌরবময় ও আবেগপূর্ণ সফরের প্রতিফলন দেখেন।

‘ছেলেবেলায় গুডিসনের বয়েজ পেন থেকে এভারটনকে দেখা শুরু করেছিলাম,’ বলেন হার্ভে, ‘আর এখন? আমার নিজের মূর্তি! যদি কেউ তখন বলত এসব ঘটবে, আমি বলতাম, ‘বোকামি করো না।’ কিন্তু এটা ঘটেছে। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে গর্বের মুহূর্তগুলির একটি।’

কলিন হার্ভে শুধুমাত্র একজন ফুটবলার ছিলেন না, ছিলেন এভারটনের আত্মা। অ্যালান বল এবং হাওয়ার্ড কেন্ডালের সঙ্গে গঠিত ‘দ্য হোলি ট্রিনিটি’ তাঁকে ক্লাবের কিংবদন্তিদের কাতারে স্থান দেয়।

খেলোয়াড় হিসেবে, কোচ হিসেবে এবং পরে ম্যানেজার ও যুব উন্নয়নে অসাধারণ অবদান রেখেছেন তিনি যেখানে ওয়েন রুনির মতো প্রতিভাও বিকশিত হয়েছে।

১৯৬০-এর দশকে যার দৃষ্টিনন্দন খেলা তাঁকে ‘হোয়াইট পেলে’ উপাধি এনে দিয়েছিল, সেই হার্ভে ছিলেন ক্লাবের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী মিডফিল্ডার।

গুডিসনের পাশের লেটা স্ট্রিটে বেড়ে ওঠা, রবিবারগুলো কাটতো দাদার মুখে ডিক্সি ডিনের কীর্তির গল্প শুনে যিনি নিজেও ছিলেন গুডিসনের নিয়মিত দর্শক। 

সেই স্মৃতি, সেই আবেগই তাঁকে গড়ে তুলেছিল এক নিবেদিতপ্রাণ এভারটোনিয়ান হিসেবে।

হার্ভের ফুটবল যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৬১ সালে, একজন শিক্ষানবিশ হিসেবে। প্রথম ম্যাচে মাঠে নামা হয়েছিল সান সিরোর মতো ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামে, ইন্টার মিলানের বিপক্ষে।

অভিষেক ম্যাচ শেষে কোচ হ্যারি ক্যাটেরিক উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন একটি গ্রামোফোন যা এখনো তাঁর স্মৃতিতে অমলিন।

‘অ্যালান বল ছিল আমার দেখা সেরা খেলোয়াড়,’ নিঃসংশয়ে বলেন হার্ভে। তাঁর মতে, বল এবং ডিক্সি ডিন এই দুইজনই এভারটনের সর্বকালের সেরা।


গুডিসনের স্মৃতির ভাণ্ডারে জমা পড়েছে অসংখ্য মুহূর্ত 

১৯৬৩ সালে প্রথমবার লীগ জয় দেখা, ১৯৭০ সালে নিজের গোলের মাধ্যমে শিরোপা নিশ্চিত করা, বাবার সামনে পদক গ্রহণ, হাওয়ার্ড কেন্ডালের কোচিং টিমে থেকে আশির দশকে এভারটনের স্বর্ণযুগ গড়ে তোলা, বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় সবই যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।

তবে গুডিসনের সবচেয়ে মর্মস্পর্শী রাতও মনে রাখেন হার্ভে, ১৯৮৯ সালের মে মাসে হিলসবোরো ট্রাজেডির পর লিভারপুলের মুখোমুখি হওয়া ম্যাচ, যা ফুটবল ইতিহাসে এক গভীর ক্ষতের স্মারক।

আজ শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি গুডিসনের বিদায় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারছেন না, তবে মনে রেখেছেন তাঁর অতীতের প্রতিটি মুহূর্ত। ‘আমি সবসময় আমার সেরাটা দিয়েছি। আমি হয়তো দুর্দান্ত ম্যানেজার ছিলাম না, কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি, এবং অসাধারণ কিছু স্মৃতি অর্জন করেছি বলেন তিনি।’

যেখানে একদিন বাবা’র জন্য অপেক্ষা করতেন, আজ সেখানেই তাঁর মূর্তি অ্যালান বল ও হাওয়ার্ড কেন্ডালের পাশে। ব্রামলি-মুর ডকে নতুন যুগ শুরু হলেও, গুডিসন পার্কের বাইরে হার্ভে’র ছায়া চিরকাল রয়ে যাবে, এভারটনের অনন্ত ইতিহাসের অংশ হিসেবে। এই মূর্তিটাই আমার জন্য যথেষ্ট।


কলিন হার্ভে যেভাবে হতিহাসে জায়গা পেলেন


কলিন হার্ভে ছোটবেলা থেকেই এভারটনের একজন অন্ধ ভক্ত ছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল গুডিসন পার্কে খেলা এবং ক্লাবের হয়ে কিছু অর্জন করা। সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছিল যখন তিনি একজন প্রতিভাবান মিডফিল্ডার হিসেবে এভারটনের মূল দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন।

হার্ভে ১৯৬০ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এভারটনের হয়ে খেলেছেন এবং এই সময়ে ক্লাব বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে। তিনি দুবার লিগ চ্যাম্পিয়নশিপ (১৯৬২-৬৩ এবং ১৯৬৯-৭০), একবার এফএ কাপ (১৯৬৬)।

এবং একবার ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপ (১৯৭০) জিতেছিলেন। তাঁর খেলার ধরণ ছিল অত্যন্ত কার্যকরী এবং তিনি দলের মাঝমাঠের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন।

খেলোয়াড় হিসেবে অবসর নেওয়ার পর, হার্ভে কোচিংয়ে আসেন এবং এভারটনের সাথে দীর্ঘকাল যুক্ত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সহকারী কোচ এবং তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকা পালন করেছেন।

১৯৮০-এর দশকে হাওয়ার্ড কেন্ডালের অধীনে এভারটনের সোনালী যুগে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। এই সময়ে এভারটন আরও দুটি লিগ শিরোপা, একটি এফএ কাপ এবং একটি ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপ জেতে।

কলিন হার্ভে এভারটনের প্রতি তাঁর দীর্ঘদিনের অবদান এবং ক্লাবের প্রতি অসামান্য আনুগত্যের জন্য একজন কিংবদন্তী হিসেবে বিবেচিত হন। ক্লাবের ইতিহাসে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং সমর্থকদের হৃদয়ে তাঁর বিশেষ স্থান চিরস্থায়ী।

সম্ভবত এই কারণেই তাঁর মূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ক্লাবের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও অবদানের একটি স্থায়ী স্বীকৃতি।