বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে মাঠ থেকে আনুষ্ঠানিক অবসরের চর্চা খুব একটা দেখা যায় না। অনেক শীর্ষ ক্রীড়াবিদ খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার ক্ষেত্রে দ্বিধায় থাকেন বা কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সরে যান।
তবে ব্যতিক্রম ঘটালেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, আগামীকাল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচটিই হবে তার ফুটবল ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
৩৮ বছর বয়সী রানা চলতি মৌসুমেও দারুণ ফর্মে ছিলেন। ফেডারেশন কাপ ও লিগ মিলিয়ে তিনবার হয়েছেন ম্যাচসেরা। তবুও নিজের ফর্ম ও ফিটনেস থাকা অবস্থাতেই ফুটবলকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
রানা বলেন, ‘আপনাদের দোয়া ও সতীর্থদের সহযোগিতায় মৌসুমটা ভালো কেটেছে। তবুও মনে হচ্ছে, এখনই বিদায়ের সেরা সময়। তাই আগামীকাল ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে মোহামেডানের বিপক্ষে শেষবার মাঠে নামব।’
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে এখনো একটি রাউন্ড বাকি থাকলেও আগামীকালের ম্যাচকেই বিদায়মঞ্চ হিসেবে বেছে নেওয়ার পেছনে রয়েছে বিশেষ একটি কারণ।
রানা জানান, ‘২০১৪ সালে মোহামেডানের হয়েই পেশাদার ফুটবলে আমার যাত্রা শুরু। তাই ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটিও মোহামেডানের বিপক্ষে খেলেই শেষ করতে চাই। আবার মোহামেডান এবার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এটাও এক ধরনের প্রতীকী মুহূর্ত।’
জাতীয় দল থেকে আনুষ্ঠানিক অবসরের সুযোগ না পেলেও ক্লাব পর্যায়ে তা করতে চাচ্ছেন রানা। তিনি বলেন, ‘২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি, যদিও তখন খেলেছে জিকো।
তখন ভেবেছিলাম, জাতীয় দল থেকে অবসর ঘোষণা দেব, যাতে নতুনরা সুযোগ পায়। কোচকে বলেছিলাম, কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। সেই আক্ষেপ থেকেই ক্লাব থেকেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছি।’
আশরাফুল ইসলাম রানার ক্যারিয়ার অন্যদের চেয়ে একটু ভিন্ন। তার ফুটবল যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। সেখান থেকে ২০১৪ সালে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি পেশাদার ফুটবলার হয়ে ওঠেন। খুব দ্রুতই জাতীয় দলের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক হয়ে উঠেন, পরে নেতৃত্বের দায়িত্বও পান।
জাতীয় দলের হয়ে ৩০টি ম্যাচ খেলা রানার ক্লাব ক্যারিয়ারে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কেটেছে শেখ রাসেলে। চট্টগ্রাম আবাহনীতে কাটিয়েছেন চারটি মৌসুম। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে সবচেয়ে আনন্দের এবং সবচেয়ে কষ্টের স্মৃতির কথাও শোনালেন তিনি।
২০১৯ সালে সল্টলেকে ৬০ হাজার দর্শকের সামনে ভারতের সঙ্গে ড্র করা ম্যাচটা আমার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত। আর সবচেয়ে কষ্টের স্মৃতি ২০১৬ সালে ভুটানে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে হেরে যাওয়া, যার ফলে বাংলাদেশ প্রায় ১৪ মাস আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাইরে ছিল।
রানার কৈশোরে ফুটবল জনপ্রিয় হলেও পরবর্তীকালে সেই রমরমা দিন আর থাকেনি। তবে হামজা ও সামিতের মতো তরুণদের আবির্ভাবে আশার আলো দেখছেন তিনি। ভবিষ্যতে ফুটবলের সঙ্গে কোচ হিসেবে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন রানা।
তিনি জানান, ‘আমি ইতোমধ্যে ‘বি’ লাইসেন্স কোচিং কোর্স শেষ করেছি। সামনে গোলরক্ষক কোর্সও করব। ভবিষ্যতে কোচিং পেশায় থাকতে চাই। স্বপ্ন দেখি, একদিন জাতীয় দলের গোলরক্ষক কোচ হব।’