২০২৬ সালের উত্তর আমেরিকান ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি যখন তুঙ্গে, তখন প্রথমবারের মতো ফিফা একটি নতুন ‘মানবাধিকার নীতিমালার’ খসড়া তৈরি করেছে। এই নীতিমালা নিয়ে একদিকে যেমন আশা তৈরি হয়েছে, তেমনই নানা প্রশ্ন ও সমালোচনাও দানা বেঁধেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করছে, ফিফা প্রথম দিকে যে কঠোর মানদণ্ড প্রস্তাব করেছিল, তা অনেকটাই শিথিল করা হয়েছে। এতে নীতিমালার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
জর্জটাউন ‘ল’ স্কুলের ও’নিল ইনস্টিটিউটের পরিচালক জেনিফার লি ফিফার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও তিনি বলেন, যদিও অনুমোদিত নীতিমালা আমাদের পরামর্শ থেকে অনেকটাই আলাদা, তবুও এমন বিস্তৃত মানবাধিকার কাঠামো অন্য কোনো ক্রীড়া সংস্থার ইতিহাসে দেখা যায়নি। তবে মনে রাখতে হবে, এটি কেবল একটি পরিকল্পনা, যা নিজে থেকে কাজ করবে না।
আয়োজক কমিটিগুলোর মধ্যে কিছু কমিটি মার্চে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তাদের খসড়া জমা দিতে পারেনি। তবে ফিফার মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছেন এবং আশা করছেন যে চূড়ান্ত পরিকল্পনা ২৯ আগস্টের মধ্যে পাওয়া যাবে।
উত্তর আমেরিকার প্রেক্ষাপট এবং চ্যালেঞ্জ
২০২৬ সালের আয়োজক দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর মানবাধিকার পরিস্থিতি কাতার বা সৌদি আরবের মতো নয়। কাতারে নির্মাণ শ্রমিকদের ভয়াবহ দুর্দশা দেখা গিয়েছিল, এবং ২০৩৪ সালের আয়োজক সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কাও ক্রমশ বাড়ছে।
তবে উত্তর আমেরিকাতেও কিছু বিশেষ চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য ফিফার নির্দেশনায় বৈষম্য প্রতিরোধ, নিরাপত্তা, মানব পাচার রোধ, গৃহহীনদের সুরক্ষা এবং শ্রমিক অধিকারের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অভিবাসন, শ্রমিক অধিকার এবং গৃহহীনদের সমস্যা
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে শ্রমিক ও ভ্রমণকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। মিয়ামি-ডেড কাউন্টির এএফএল সিআইও-এর প্রেসিডেন্ট জেফ মিচেল বলেন, বিশ্বকাপের সময় আইসিই (অভিবাসন বিভাগ)-এর উপস্থিতি কাম্য নয়, কিন্তু এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
স্থানীয় আয়োজকদের বিরুদ্ধে শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় যথেষ্ট উদ্যোগ না নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
১৯৯৬ সালের আটলান্টা অলিম্পিকের সময় হাজার হাজার গৃহহীন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছিল। এবারও বিশ্বকাপের আগে গৃহহীনতা দূরীকরণের নামে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
যদিও আটলান্টা সিটি কর্মকর্তারা 'ডাউনটাউন রাইজিং' নামে একটি প্রকল্পের কথা বলেছেন, যার মাধ্যমে গৃহহীনদের জেল না পাঠিয়ে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমও একই ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন, কিন্তু মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এসব উদ্যোগ গৃহহীনদের ওপর নজরদারি বাড়াচ্ছে।
এত সব উদ্বেগের মধ্যেও কিছু ইতিবাচক দিকও দেখা যাচ্ছে। আটলান্টার প্রধান ন্যায়পরায়ণতা কর্মকর্তা বলেন, আমাদের শহর দীর্ঘ সময় ধরে মানব পাচার প্রতিরোধে কাজ করছে, এবং বিশ্বকাপের সময় এই প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা হবে।
সিয়াটলের একটি বড় শ্রমিক সংগঠন এবং স্থানীয় আয়োজক কমিটি শ্রমিক অধিকার রক্ষায় একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন