ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) আবাসন ক্যাম্পে একাদশ শ্রেণিতে পড়ূয়া এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
এমনকি সেখানে ওই কিশোরী আটকে ধর্ষণের খবর পেয়ে এবং ফোন ট্র্যাক করে রাতে পুলিশ এলেও তাদের অভিযান চালাতে দেয়নি বিএসএফ।
অথচ পরদিন সেখানেই ধর্ষিত কিশোরীকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলার রানিনগরে গত ১১মার্চ ওই ঘটনা ঘটেছে। তবে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় গত ১৩ মার্চ সকালে।
এরআগেও ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের সময় দক্ষিণবঙ্গের এক জেলায় বিএসএফের টিমকে এক স্কুলে রাখা হয়েছিল। সেখানে মিড-ডে মিল নিতে আসা এক কিশোরীকে যৌন নিপীড়ন করেছিলেন এক জওয়ান।
২০২৬-এ রাজ্যে ফের বিধানসভা ভোট। ফলে বিএসএফের ক্যাম্পে এমন ঘটনায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তা নিয়েও।
বিএসএফের আবাসন ক্যাম্পে ধর্ষণের ঘটনার বিষয়ে পুলিশ ও স্থানীয় এবং পরিবার সূত্র জানায়, গত ১১ মার্চ পরীক্ষা শেষে বান্ধবীর বাড়িতে থাকবে বলে পরিবারকে জানিয়েছিল।
কিন্তু ১২ মার্চ রাতে সে বাবাকে ফোন করে রানিনগর বিএসএফ ক্যাম্পের আবাসনে তাকে আটকে রাখা ও যৌন নির্যাতন চালানোর কথা জানায়।
মেয়ের ফোন পেয়ে বাবা স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্যর মাধ্যমে পুলিশে যোগাযোগ করেন। পুলিশ কিশোরীর ফোন ট্র্যাক করে জানতে পারে সে রানিনগর বিএসএফ ক্যাম্পের ভিতরেই রয়েছে।
কোতোয়ালি থানার আইসি’র নেতৃত্বে পুলিশের টিম ওই রাতেই ঘটনাস্থলে যায়।
কিন্তু নিরাপত্তার নাম করে পুলিশকে ওই রাতে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরদিন পুলিশ ক্যাম্প আবাসনের এক ঘর থেকে অভিযুক্তকে আটক করে। ওই কিশোরীকেও উদ্ধার করে।
গত ১৩ মার্চ সকালে ৮৪টি আবাসনে তল্লাশি চালিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ জানায়।
উত্তরবঙ্গ সংবাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পরে পরিবারের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। তার বাবা বিএসএফ কর্মী। তিনি সস্ত্রীক বিহারে নিজের বাড়ি গিয়েছিলেন।
ছেলে সেখানে একাই ছিল। বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগে পূর্বপরিচিত ওই কিশোরীকে আবাসনে নিয়ে গিয়ে ছেলে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
বিএসএফের আবাসন ক্যাম্পে এমন ঘটনায় সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন তুললেন রাজ্যের নারী ও শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী। পাশাপাশি তিনি এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সরাসরি দিল্লিকে লিখিতভাবে জানিয়ে প্রতিকার দাবি করবেন।
আধাসেনার ক্যাম্পের কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনীতে কীভাবে সবার নজর এড়িয়ে ওই কিশোরী ঢুকল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনন্যা।
গত রোববার নির্যাতিতাসহ পরিবারের লোকেরা জলপাইগুড়ি সার্কিট হাউসে এসে অনন্যা চক্রবর্তী সহ কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। তারা অভিযুক্তর কঠোর শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি নির্যাতিতা সহ পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেয় কমিশন।
পরে এদিন অনন্যা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিশোরের সাথে ওই কিশোরীর সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব হয়েছিল। বাবা-মা ক্যাম্প আবাসনে না থাকায় সুযোগে কিশোর কিশোরী মেয়েটিকে ভুল বুঝিয়ে সেখানে এনে আটকে রাখে ও অত্যাচার চালায়।’
‘কিশোরী অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে পরিবারকে ঘটনার কথা জানায়। এরপর পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার ও মেয়েটিকে উদ্ধার করে। ঘটনায় ক্যাম্প আবাসনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কীভাবে বাইরের বাসিন্দা ওই নাবালিকা ক্যাম্পে ঢুকল? এ থেকে বোঝা যাচ্ছে বিএসএফ ক্যাম্পে যে কেউ যখন-তখন ঢুকতে পারে। এখানে কোনও নিরাপত্তা নেই।’
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের সময় দক্ষিণবঙ্গে স্কুলে মিড-ডে মিল নিতে আসা এক কিশোরী বিএসএফ দ্বারা যৌন নিগ্রহের ঘটনা তোলে ধরে অনন্যা সাংবাদিকদের জানান, ‘২০২৬-এ রাজ্যে ফের বিধানসভা ভোট। আবারও কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে ‘
‘সেক্ষেত্রে কী হবে তা নিয়ে এখনই যথেষ্টই চিন্তায় আছি। কারণ, আমাদের ২০২১-এর খারাপ অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশের রিপোর্ট পেলেই কমিশন থেকে সরাসরি দিল্লিতে বিএসএফকে চিঠি পাঠানো হবে।’



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন