বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম

ইলন মাস্কের কল্যাণে

মস্তিষ্কে মাইন্ড-রিডিং চিপ নিয়ে বসবাস

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম

মস্তিষ্কে মাইন্ড-রিডিং চিপ নিয়ে বসবাস

ছবি: সংগৃহীত

মস্তিষ্কে একটি চিপ বসানো আছে, যা চিন্তাকে কম্পিউটার কমান্ডে রূপান্তরিত করতে পারে- শুনতে সায়েন্স ফিকশন মনে হলেও এটি বাস্তব নোল্যান্ড আরবাউয়ের জন্য।  

একটি দুর্ঘটনায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার আট বছর পর, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এই ৩০ বছর বয়সী ব্যক্তি মার্কিন নিউরোটেকনোলজি সংস্থা, নিউরালিংক-এর প্রথম রোগী হন।  

এটি অবশ্য প্রথম মস্তিষ্ক সংযোজনকারী চিপ নয়, অন্য কয়েকটি কোম্পানিও এরকম ডিভাইস তৈরি করেছে এর আগে। তবে নোল্যান্ডের চিপটি বিশেষ নজর কেড়েছে, কারণ নিউরালিংকের প্রতিষ্ঠাতা। ইলন মাস্ক।  

তবে নোল্যান্ড বলছেন, বিষয়টি তার বা মাস্কের সম্পর্কে নয়, বরং এটি বিজ্ঞানের অগ্রগতি।  

তিনি বলেন, তিনি জানতেন যে এটি ঝুঁকিপূর্ণ, ‘তবে ভালো হোক বা খারাপ, আমি ভবিষ্যতে সাহায্য করতে পারব।’

‘যদি এটি সফল হয়, তবে নিউরালিংকের গবেষণার অংশ হতে পারবো। আর যদি কিছু খারাপ ঘটে, তবে বিজ্ঞানীরা সেখান থেকে শিক্ষা নেবে,’ বলেন নোল্যান্ড।  

নিয়ন্ত্রণ নেই, গোপনীয়তাও নেই  

নোল্যান্ড, যিনি অ্যারিজোনার বাসিন্দা, ২০১৬ সালে এক ডুব সাঁতারের দুর্ঘটনায় কাঁধের নিচ থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পরেন। তার আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে, তিনি ভেবেছিলেন তিনি আর কখনো পড়াশোনা, কাজ বা তার প্রিয় ভিডিও গেম খেলতে পারবেন না।  

‘আপনার নিজের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না, ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও নেই, এবং এটি খুব কঠিন,’ বলে তিনি আরও বলেন, ‘আপনাকে সবকিছুর জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করতে শিখতে হয়।’

তিনি জানান নিউরালিংকের চিপ তার একসময়ের হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতার একটি অংশ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করছে- যা তাকে কেবল তার চিন্তা দিয়ে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দিচ্ছে।  

কীভাবে কাজ করে এই মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেস?

নিউরালিংকের চিপটি ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI) নামে পরিচিত, যা মানুষের চিন্তার মাধ্যমে সৃষ্ট ক্ষুদ্র বিদ্যুৎ তরঙ্গ শনাক্ত করে এবং তা ডিজিটাল কমান্ডে রূপান্তরিত করে।  

যখন কেউ কোনো কাজ করার কথা চিন্তা করে, তখন মস্তিষ্ক ছোট ছোট ইলেকট্রিকাল সংকেত তৈরি করে। এই চিপ সেই সংকেতকে একটি কম্পিউটারের কার্সর নড়ানোর মতো কমান্ডে অনুবাদ করতে পারে।  

এই প্রযুক্তি নিয়ে বিজ্ঞানীরা বহু দশক ধরে গবেষণা করছেন, তবে ইলন মাস্কের সম্পৃক্ততা এই প্রযুক্তিকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। নিউরালিংক ইতিমধ্যেই বড় বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে এর নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।  

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ‘নিউরালিংকের এই ইমপ্লান্ট বিজ্ঞানের একটি বড় সাফল্য।’ তবে তারা এটাও সতর্ক করেছেন যে ‘এখনই এর চূড়ান্ত প্রভাব মূল্যায়ন করা কঠিন, বিশেষ করে মাস্ক তার কোম্পানির প্রচারণায় অত্যন্ত দক্ষ।’

মাস্ক নিজে তখন শুধুমাত্র বলেছিলেন: ‘প্রাথমিক পরীক্ষায় প্রতিশ্রুতিশীল নিউরন সংকেত দেখা যাচ্ছে।’ কিন্তু নোল্যান্ডের ভাষায়, মাস্ক আসলে অনেক বেশি আশাবাদী ছিলেন।

নোল্যান্ড বলেন, ‘তিনি ঠিক আমার মতোই রোমাঞ্চিত ছিলেন এটি শুরু করতে।’  

নোল্যান্ড যখন অস্ত্রোপচারের পর জেগে ওঠেন, তখন তিনি শুধু নিজের আঙুল নাড়ানোর কথা চিন্তা করেই স্ক্রিনের কার্সর নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন। ‘আমি জানতাম না কী হবে। এটি একেবারে সায়েন্স ফিকশনের মতো মনে হচ্ছিল,’ তিনি বলেন।  

কিন্তু যখন তিনি নিজের মস্তিষ্কের নিউরন সংকেত স্ক্রিনে দেখেন, তখন বুঝতে পারেন যে এটি সত্যিই কাজ করছে। আরও চমকপ্রদ বিষয় হলো, কিছুদিন পর থেকেই তিনি চিন্তা করেই দাবা ও ভিডিও গেম খেলতে সক্ষম হন।  

‘আমি ছোটবেলা থেকে ভিডিও গেম খেলতাম,’ বলেন নোল্যান্ড, ‘কিন্তু পক্ষাঘাতের পর আমাকে তা ছেড়ে দিতে হয়।’

‘এখন আমি আমার বন্ধুদের হারিয়ে দিচ্ছি গেমে- যা একেবারেই অসম্ভব মনে হতো, কিন্তু এটি বাস্তব।’

প্রাইভেসি এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

যদিও নোল্যান্ডের অভিজ্ঞতা এই প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে তুলে ধরে, কিছু বিশেষজ্ঞ এটিকে সতর্কতার সঙ্গে দেখতে বলছেন।  

সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী অনীল সেথ বলেন, ‘এই প্রযুক্তির প্রধান সমস্যা হলো গোপনীয়তা।’

‘যদি আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বাইরে সংরক্ষিত হয়, তাহলে শুধু আমাদের কাজ নয়, বরং আমাদের চিন্তা, বিশ্বাস, এবং অনুভূতিও অন্যদের কাছে পৌঁছে যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একবার কেউ আপনার মাথার ভেতরের তথ্য সংগ্রহ করতে পারলে, তখন ব্যক্তিগত গোপনীয়তার আর কোনো সীমারেখা থাকবে না।’

কিন্তু নোল্যান্ড এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত নন। তিনি চান এই প্রযুক্তি আরও উন্নত হোক।

তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে এই চিপটি তাকে তার হুইলচেয়ার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে, এমনকি রোবট চালানোর মতো কিছু করতেও সক্ষম হবে।

তবে বর্তমান অবস্থায়ও সবকিছু একদম নিখুঁত নয়।  

একবার চিপটি তার মস্তিষ্কের সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যার ফলে তিনি একেবারেই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।

‘এটি আমার জন্য খুবই হতাশাজনক ছিল,’বলেন নোল্যান্ড, ‘আমি ভেবেছিলাম, হয়তো আর কখনো নিউরালিংক ব্যবহার করতে পারব না।’

পরে প্রকৌশলীরা সফটওয়্যারে আপডেট এনে এটি ঠিক করে দেন। তবে এটি দেখিয়ে দেয়, এই প্রযুক্তির এখনো অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

বড় ব্যবসার দুনিয়ায় নিউরালিংক

নিউরালিংক একমাত্র কোম্পানি নয়, যারা *মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে ডিজিটালি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। আরেকটি কোম্পানি সিঙ্ক্রোন (Synchron) একটি ডিভাইস তৈরি করেছে, যা কম ইনভেসিভ পদ্ধতিতে ইনপ্ল্যান্ট করা যায়।  

তাদের সেন্ট্রোড (Stentrode) ডিভাইসটি ব্রেইন সার্জারির প্রয়োজন ছাড়াই মানুষের রক্তনালীর মাধ্যমে মস্তিষ্কে বসানো যায়। সিঙ্ক্রোনের কর্মকর্তা রিকি ব্যানারজি ব্যাখ্যা করেন, ‘এটি মানুষের আঙুল নড়ানোর চিন্তার পার্থক্য শনাক্ত করতে পারে এবং সেটিকে কম্পিউটার সিগন্যালে রূপান্তরিত করে।’

একজন ব্যবহারকারী মার্ক জানান যে, তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি এই ডিভাইস দিয়ে অ্যাপলের ভিশন প্রো হেডসেট ব্যবহার করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য বিশাল পরিবর্তন আসতে দেখছি।’  

নোল্যান্ডের ভবিষ্যৎ

নোল্যান্ড নিউরালিংকের ছয় বছরের একটি পরীক্ষামূলক গবেষণায় অংশ নিয়েছেন- এরপর তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, তার অভিজ্ঞতা হয়তো এই প্রযুক্তির অগ্রগতির কেবল শুরু মাত্র। আমরা আমাদের মস্তিষ্ক সম্পর্কে এত কম জানি, আর এই প্রযুক্তি আমাদের অনেক কিছু শিখতে সাহায্য করছে।
সূত্র: বিবিসি

আরবি/এসএস

Link copied!