ভারতের পাঞ্জাবের একটি কৃষিক্ষেতে রাফাল যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পড়েছিল এবং সেনা সদস্যরা সেগুলো সরানোর কাজে যুক্ত ছিলেন, ‘বিবিসি ভেরিফাই’ তার প্রমাণ পেয়েছে। ফ্রান্সের ডাসোঁ এভিয়েশনের তৈরি রাফাল হলো ভারতীয় বিমানবাহিনীর সম্ভারে সবচেয়ে আধুনিক ও বিধ্বংসী যুদ্ধবিমান।
এর আগে বুধবার পাকিস্তানের তরফে দাবি করা হয়েছিল, ভারতের সামরিক অভিযানের সময় তারা অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে অন্তত তিনটি রাফাল আছে বলেও বলা হয়েছিল।
যদিও সেই দাবির পক্ষে কোনো ছবি বা ভিডিও পেশ করা হয়নি, ভারতও সে কথা স্বীকার করেনি। ফলে বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা ও সংশয় ছিলই।
তবে বিবিসির তথ্য ও খবর যাচাই করার বিভাগ ‘বিবিসি ভেরিফাই’ তাদের নিজস্ব অনুসন্ধানে এমন তিনটি ভিডিও ‘অথেন্টিকেট’ করতে পেরেছে বা সত্যতা যাচাই করতে পেরেছে– যাতে ফ্রান্সের নির্মিত রাফাল বিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে, যেগুলো ভারতের বিমানবাহিনী ব্যবহার করে থাকে।
এই তিনটি ভিডিও ক্লিপের একটিকে ‘জিওলোকেট’ করে সেটি ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের ভাতিন্ডার কাছের একটি জায়গা বলেও চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে সেনা সদস্যরা বিধ্বস্ত বিমানটির ধ্বংসস্তূপ থেকে বিভিন্ন অংশ অন্যত্র সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন।
সেই একই লোকেশনে আরও দুটি ভিডিও ‘বিবিসি ভেরিফাই’-এর হাতে এসেছে, যে ছবিগুলো রাতের অন্ধকারে তোলা হয়েছে। এর একটি ভিডিওতে কৃষিক্ষেতে ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অন্যটিতে দেখা গেছে মাঝআকাশে একটি প্রোজেক্টাইলে আগুন ধরে যাচ্ছে, তারপর ক্ষেতের মাঝখানে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও বর্তমানে একটি রিস্ক ইনটেলিজেন্স সংস্থার কর্ণধার জাস্টিন ক্রাম্প বিবিসি ভেরিফাই-কে বলেছেন, তিনি ধারণা করছেন ওই ধ্বংসাবশেষ একটি ফরাসি এয়ার-টু-এয়ার মিসাইলের, যে ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মিরাজ-২০০০ ও রাফাল উভয় যুদ্ধবিমানেই ব্যবহার করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়াতে আরও একটি ছবিও ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাতে একটি বিমানের ‘টেইল ফিন’ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে – যার গায়ে ‘বিএস০০১’ ও ‘রাফাল’ ইংরেজিতে লেখা আছে।
পাকিস্তান সত্যিই ভারতের কোনও যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে কি না, ভারত বৃহস্পতিবারও এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছে। ৮ মে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘অপারেশন সিঁন্দুর’ নিয়ে দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফ করতে উপস্থিত হয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।
তার সঙ্গে গত দিনের মতোই ছিলেন দু’জন নারী সামরিক কর্মকর্তা সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং।
গত বুধবার ব্রিফিংয়ে কোনো প্রশ্ন না নেওয়া হলেও এদিন অবশ্য তারা কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তবে সামরিক অভিযান সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য বা ‘অপারেশনাল ডিটেলস’ প্রকাশ করা হবে না বলেও জানানো হয়েছিল।
ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পাকিস্তানি দাবি সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হলে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘সঠিক সময় এলে এ ব্যাপারে সরকারি তথ্য আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করা হবে’।
একই সঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, পাকিস্তান ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে’ অসত্য কথা বলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। আর এই প্রবণতা জাতিসংঘে ১৯৪৮ সালে তাদের বক্তব্য থেকেই শুরু হয়েছে।