সৌদি আরবের উদ্দ্যেশে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার (১২ মে) ওয়াশিংটন ডিসির জয়েন্ট বেইজ অ্যান্ড্রুজ থেকে এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে সৌদির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
জানা গেছে, এই সফরে ট্রাম্প তিনটি ধনী উপসাগরীয় দেশ- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার সফর করবেন। সফরে তিনি বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত চুক্তি সুনিশ্চিত করবেন।
বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা ট্রাম্পের মূল টার্গেট
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের লক্ষ্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিকভাবেও এই সফর ব্যবহার করতে চান।
তার সফরে আরব দেশগুলো থেকে ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ও সামরিক চুক্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। এসব দেশের প্রত্যাশাও কম নয়।
সৌদি আরব: নিরাপত্তা চুক্তি ও পারমাণবিক কর্মসূচির স্বীকৃতি চায়
সৌদি আরব চায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা চুক্তি। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে একটি বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে চায়। তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল উদ্বিগ্ন।
তবুও রিয়াদ যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই কর্মসূচিতে মার্কিন সহযোগিতা পেলে ওয়াশিংটনের কোম্পানিগুলোকেই চুক্তি দেবে।
গত বছর একটি প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল, কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে তা থেমে যায়। এবার ট্রাম্পের সফরে এই চুক্তি আবার আলোচনায় আসতে পারে।
এ ছাড়া সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্র এক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, জানুয়ারিতে তারা ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় আধিপত্য চায়
এই দেশটি আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল বিনিয়োগ করেছে। তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আধুনিক প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর, জ্বালানি ও উৎপাদন খাতে এক দশকে প্রায় ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে।
আমিরাত চায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের অংশীদারত্ব কেবল অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগতও হোক। তাদের মতে, এই অংশীদারিত্ব উপসাগরীয় ভবিষ্যতের জন্য জরুরি।
কাতার: মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে চায়
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি কাতারে। আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটি থেকে মার্কিন সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়। এই ঘাঁটির উপস্থিতি আরও দশ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র কাতারকে ‘প্রধান অ-ন্যাটো মিত্র’ ঘোষণা করেছিল।
গাজা, আফগানিস্তান ও সিরিয়া ইস্যুতে কাতার একাধিকবার মধ্যস্থতা করেছে। এবার সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবহার করে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ দেবে, যেন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
উপসাগরীয়দের কাছে ট্রাম্প এখন ‘একবারের সুযোগ’
ট্রাম্পের ফিরে আসা অনেক উপসাগরীয় দেশের কাছে এক ‘জীবনের একবারই আসা সুযোগ’। তারা মনে করে, এই সময়টা কাজে লাগিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করা সম্ভব।
তারা ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ছে, একের পর এক বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। আবার নিজেরাও চাইছে মধ্যপ্রাচ্য সংকটগুলোর সমাধানে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সফর মূলত তিন দেশের কাছ থেকে ট্রাম্প কী আদায় করতে পারেন এবং তারা কীভাবে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেন, তার দিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
ট্রাম্পের এই সফরে যুক্তরাষ্ট্র যেমন বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ ও চুক্তি পাবে, তেমনি উপসাগরীয় দেশগুলোও নিজেদের নিরাপত্তা, কৌশলগত সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ সুরক্ষার চেষ্টা করছে। সফর শেষে কারা কতটা লাভবান হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
তবে এটুকু নিশ্চিত, এই সফর শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং পারস্পরিক স্বার্থ ও প্রত্যাশার এক জটিল সমীকরণ।
আপনার মতামত লিখুন :