বিশ্ব রাজনীতি ও প্রযুক্তি জগতের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন এখন প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে রূপ নিয়েছে। এক সময়ের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্কের ইতি টেনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ইলন মাস্কের সঙ্গে তার সম্পর্ক শেষ।
রোববার (৮ জুন) বিবিসির অনলাইন প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, মাস্কের সঙ্গে তার সম্পর্ক কি শেষ? উত্তরে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি তা-ই ধরে নিচ্ছি। এরপর মাস্কের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চান কি না জানতে চাওয়া হলে ট্রাম্প সরাসরি ‘না’ বলে দেন।’
এর পাশাপাশি ট্রাম্প ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে মাস্ক যদি ডেমোক্রেটদের অর্থায়ন করেন, তাহলে ‘গুরুতর পরিণতির’ হুঁশিয়ারিও দেন। যদিও সেই পরিণতির বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
শুধু ট্রাম্প নন, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও মাস্ককে সতর্ক করেছেন। তিনি মন্তব্য করেন, “টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান হিসেবে ইলন মাস্ক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে বড় ভুল করেছেন।”
ট্রাম্প-মাস্ক বিরোধের সূত্রপাত হয় গত সপ্তাহে, যখন মাস্ক মার্কিন সরকারের কর ও ব্যয় নীতিকে ‘জঘন্য’ বলে সমালোচনা করেন। পরদিন ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তপ্ত কথোপকথনের মধ্য দিয়ে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ওই সময় ওভাল অফিসে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেদরিখ মের্জ উপস্থিত ছিলেন এবং সেখানে এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়। ট্রাম্পের আচরণ ছিল যেন প্রত্যাখ্যাত প্রেমিকের মতো—হতাশ ও রাগান্বিত।
ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেন, মাস্ক যে দাবি করছেন তার আর্থিক সহায়তা ছাড়া ট্রাম্পের পক্ষে নির্বাচনে জেতা সম্ভব ছিল না তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি আরও বলেন, মাস্ক এখন সুর বদলে ফেলেছেন কারণ রিপাবলিকানদের চাপের মুখে বৈদ্যুতিক গাড়ির ভর্তুকি বন্ধ হলে টেসলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এর জবাবে মাস্ক তার মালিকানাধীন সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ (যেখানে তার ২২ কোটি অনুসারী রয়েছে) লিখেন, “হোয়াটএভার” অর্থাৎ ‘যা খুশি হোক’। তিনি জানান, গাড়ির ভর্তুকি নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। বরং তিনি জাতীয় ঋণ কমিয়ে আনার পক্ষে, যেটিকে তিনি আমেরিকার জন্য একটি ‘অস্তিত্বগত হুমকি’ বলে মনে করেন।
এতকিছুর পর মাস্ক অভিযোগ করেন, ট্রাম্প তার প্রতি ‘অকৃতজ্ঞ’। তিনি বলেন, “আমার সহায়তা ছাড়া হয়তো রিপাবলিকানরা নির্বাচনে জিতত না।” এরপর তিনি একের পর এক কটাক্ষ করে ট্রাম্পকে আক্রমণ করতে থাকেন।
ট্রাম্প-মাস্ক দ্বন্দ্ব কত দূর গড়াবে?ট্রাম্প-মাস্ক দ্বন্দ্ব কত দূর গড়াবে? সঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে তার সাহায্য ছাড়া গত বছরের নির্বাচনে রিপাবলিকানরা হয়তো জয় পেতো না।
"এত অকৃতজ্ঞতা," তিনি ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে বলেন। এরপর একের পর এক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন এই বিলিয়নেয়ার এবং বিবাদ তীব্রভাবে চলতে থাকে। শেষমেশ ট্রাম্প জানিয়ে দিলেন যে মাস্কের সঙ্গে তার সম্পর্ক শেষ।
আপনার মতামত লিখুন :