গুজরাটের আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির একজন যাত্রী বেঁচে আছেন। যুক্তরাজ্যের নাগরিক ওই ব্যক্তির নাম বিশ্বাস কুমার রমেশ (৪০। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এনডিটিভির এক খবরে বলা হয়, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন এক যুবক, যিনি বিমানের ১১-ই নম্বর আসনে বসা ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাঁটতে দেখা গেছে। তার পরনে ছিল সাদা টি-শার্ট ও কালো ট্রাউজার, মুখ ও কপালে ছিল জখমের দাগ।
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বাস কুমার রমেশ ও তার ভাই অজয় কুমার রমেশ (৪৫) একই ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছিলেন। আহত বিশ্বাস কুমারকে আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিশ্বাস কুমার হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, উড়োজাহাজটি বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের মাত্র ৩০ সেকেন্ড পরেই বিকট শব্দ হয়, এরপরই বিধ্বস্ত হয়। সবকিছু এত দ্রুত ঘটে গেল। বিশ্বাস কুমার বুকে, চোখে ও পায়ে আঘাত পেয়েছেন।
নিজের বোর্ডিং পাস দেখিয়ে বিশ্বাস কুমার বলেন, যখন উঠে দাঁড়ালাম, চারপাশে শুধু লাশ পড়ে ছিল। আমি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি; উঠে দাঁড়িয়ে দৌড় দিই। আমার চারপাশে উড়োজাহাজের ভাঙা টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। কেউ একজন আমাকে ধরে অ্যাম্বুলেন্সে তোলে এবং হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
বিশ্বাস কুমার ২০ বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করেন। সেখানে তার স্ত্রী ও মেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, তার ভাই অজয় একই উড়োজাহাজের আরেক সারিতে ছিলেন। সে (ভাই) আমার সঙ্গেই যাত্রা করেছিল, এখন তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। দয়া করে তাকে খুঁজে পেতে আমাকে সাহায্য করুন।
এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজটি আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গেটউইক যাচ্ছিল। উড়োজাহাজটিতে ২৪২ জন আরোহী ছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন ২৩০ জন যাত্রী ও ১২ জন কেবিন ক্রু। একমাত্র বিশ্বাস কুমার রমেশ ছাড়া বাকি সবাই মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২০০ এর বেশি মরদেহ উদ্ধারও হয়েছে।
২৩০ যাত্রীর মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ ও একজন কানাডিয়ান বলে জানা গেছে।
এদিকে, বিমান দুর্ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান রানওয়ে থেকে উড্ডয়ন করার পর কিছুটা দুলতে দুলতে এগিয়ে যাচ্ছিল। এর কিছু সময় পর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আঘাত হানে। এতে ছাত্রাবাসের পাঁচজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
বিমান চলাচল বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সাবেক ক্যাপ্টেন সৌরভ ভাটনাগর এনডিটিভিকে জানান, উড্ডয়নের পর সম্ভবত বিমানটির পাখির আঘাতে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞের মতে, উড্ডয়নের সময় বিমানটির শক্তির অভাব দেখা দেয়, যার ফলে বিমানটি ওপরের দিকে উঠতে ব্যর্থ হয় এবং এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
ভাটনাগর বলেন, প্রথমতো, মনে হচ্ছে একাধিক পাখি আঘাত হানায় দুটি ইঞ্জিনও বিকল হয়ে গেছে। উড্ডয়ন ছিল নিখুঁত, তবে ল্যান্ডিং গিয়ারটি ওপরে তোলার আগেই বিমানটি নিচে নামা শুরু করে। এর কারণ সাধারণত ইঞ্জিনের বিকল হওয়া অথবা বিমানের আকাশে থাকার সামর্থ্য হারানো।
তিনি আরও জানান, ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে উড্ডয়ন ছিল বেশ সুন্দর এবং বিমানটি নিয়ন্ত্রিতভাবে নিচে নেমে আসে। পাইলট জরুরি পরিস্থিতির জন্য ‘মে ডে’ কল করেছিলেন, যা দেখায় যে বিমানটি তীব্র পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল।
ঘটনার এখনো তদন্ত চলছে এবং ঘটনার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :