ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ‘ডজন ডজন’ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এবার পাল্টা জবাব হিসেবে ইসরায়েলে ১০০টিরও বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। যা সাম্প্রতিক সময়ে দুদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা। তবে এই হামলার শুরুটা হয়েছিল গত বছর এপ্রিলে দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে বোমা হামলাকে কেন্দ্র করে। এরপর দফায় দফায় বহুবার সংঘাতে জড়িয়েছে দুদেশ।
গত বছরের এপ্রিলে দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে বোমা হামলার পর ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায় ইরান। এছাড়া, ২০২৪ সালের অক্টোবরে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ এবং ইরানি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্বাস নীলফোরৌশানকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইসারয়েলে দ্বিতীয় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। যার প্রতিক্রিয়ায় দুবারই ইরানের সামরিক স্থাপনা এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে হামলা চালিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় ইসরায়েল।
তবে আগের হামলাগুলোর তুলনায় এবারের হামলাকে সম্পূর্ণ আলদা হিসেবে দেখছেন আল জাজিরার সংবাদদাতা দোরসা জাব্বারি।
চলমান সংঘাত নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা এই সাংবাদিকের বলেন, এবারের হামলা সম্পূর্ণরূপে আশ্চর্যজনক ছিল এবং এই আক্রমণের মাত্রা অনেক বড় এবং বিস্তৃত ছিল। আমরা তাবরিজ, তেহরান, কেরমানশাহ, ইসফাহান, নাতানজে আক্রমণের শিকার হতে দেখছি। এর মাত্রা,পরিধি, অবশ্যই অনেক বড়, এবং এটি অব্যাহত রয়েছে। এটি কোনো কৌশলগত অভ্যন্তরীণ আক্রমণ নয়। আর এ হামলা কখন শেষ হবে তা আমাদের কোনো ধারণা নেই।
চলমান সংঘাত নিয়ে এক বিবৃতিতে খামেনি বলেন, ভোরবেলায় ইহুদিবাদী সরকার আমাদের প্রিয় দেশের বুকে তার রক্তাক্ত ও কলুষিত হাত বিস্তার করেছে, আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে আগের থেকেও স্পষ্টভাবে তার বর্বর স্বভাব প্রকাশ করেছে। এর জন্য তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতেই হবে।
তিনি বলেন, এই হামলার মাধ্যমে ইহুদিবাদীরা নিজেদের জন্য এক তিক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি ডেকে এনেছে, এবং তা তাদের ভোগ করতেই হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শত্রুর এই আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী শহীদ হয়েছেন। তবে ইনশাআল্লাহ, তাদের স্থলাভিষিক্তরা দ্রুতই সেই দায়িত্ব তুলে নিয়ে কাজ শুরু করবেন। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনী আল্লাহর ইচ্ছায় ইসরাইলের মতো শত্রুদের কখনও ছাড় দেবে না।’
সংবাদ সংস্থা তাসনিমের খবরে আরও বলা হয়েছে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং দুজন পারমাণবিক বিজ্ঞানীও নিহত হয়েছেন। নিহত দুই পরমাণু বিজ্ঞানী হলেন মোহাম্মদ মেদহি তেহরানচি ও ফেরেইদুন আব্বাসি।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর একটি আবাসিক ভবনে চালানো হামলায় নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
এছাড়া ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানি হামলায় 'গুরুতর আহত' হয়েছেন বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ জানিয়েছে। তবে খামেনি সুস্থ আছেন, তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন ইরানি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আবুল ফজল শেকারচি বলেছেন, এ হামলার জন্য 'চরম মূল্য' দিতে হবে ইসরায়েলকে।
এদিকে, ইরানে হামলা চালানোর পর পাল্টা হামলার শঙ্কায় ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ইসরায়েল এ হামলাকে ‘রাইজিং লায়ন’ নাম দিয়েছে। ইরানের কমান্ডার এবং ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানোর পর পাল্টা হামলার আশঙ্কায় রাজ্য জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তেহেরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা ঠেকাতে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। ইরানের সংবাদমাধ্যম এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অঞ্চলে ইসরায়েলের হামলা চালানোর বিষয়টি জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রেকর্ডকৃত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের ইতিহাসের একটি নির্ণায়ক মুহূর্তে আছি।’
তিনি বলেন, ইসরায়েল একটি অভিযানে ইরানের পারমাণবিক বোমা নির্মাণে যুক্ত বিজ্ঞানী, তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং নাতাঞ্জের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং এই অভিযান আরও কয়েক দিন চলবে।
একজন জ্যেষ্ঠ ইরানি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বৈঠক করছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের ওপর পূর্ব প্রতিরোধমূলক হামলার পর, ইসরায়েল ও এর বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা অবধারিত।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ইসরায়েল এককভাবে এ হামলা চালিয়েছে। কারণ তারা (ইসরায়েল) মনে করে এই হামলা তাদের আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল।
আপনার মতামত লিখুন :