যুদ্ধ মানেই এখন আর কেবল স্থলভিত্তিক সংঘাত নয়, আকাশপথের আধিপত্যই হয়ে উঠেছে আধুনিক যুদ্ধের মূল রূপরেখা। কার আগ্রাসন কত দ্রুত, কার হামলা কত নিখুঁত এবং ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কতখানি- এসব নিয়েই চলছে সামরিক দাপটের প্রতিযোগিতা। আধুনিক বিশ্ব যেন এখন কেবল অস্ত্রের মহড়া এবং পারমাণবিক শক্তির জানান দেওয়ার মঞ্চ।
বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র এখন পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত। চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ভারত, ইসরায়েল ও ইরান- এসব দেশের কাছে এমন ভয়ঙ্কর অস্ত্র এখন খুব সাধারণ বাস্তবতা। তবে পারমাণবিক শক্তির বাইরেও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধবিমানই হয়ে উঠেছে সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। আর এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে আলোচিত নাম- ‘এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান।’
এফ-৩৫ কেন এত আলোচিত?
এফ-৩৫ হলো একবিংশ শতাব্দীর সর্বাধুনিক আকাশযুদ্ধের অস্ত্র। এই বিমানটি তৈরি হয়েছে এমনভাবে, যাতে এটি শত্রুর রাডারে ধরা না পড়ে। একই সঙ্গে এটি শত্রুর অবস্থান শনাক্ত করে আঘাত হানতে পারে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের মূল ক্ষমতা
# সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় প্রায় এক হাজার নয়শ কিলোমিটার।
# জ্বালানি ধারণক্ষমতা প্রায় সতেরো হাজার কেজি।
# অস্ত্র বহন করতে পারে আট হাজার কেজির বেশি।
# রাডার বিভ্রান্ত করার মতো গঠন এবং আকার।
# একইসঙ্গে আকাশ থেকে আকাশ এবং আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানার সক্ষমতা।
# একাধিক সেন্সর ও সিগন্যাল বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা।
এই বিমানের চালক তার বিশেষ হেলমেটের মাধ্যমে পুরো যুদ্ধক্ষেত্রের চিত্র স্পষ্টভাবে দেখতে পারেন এবং বিমান পরিচালনার পাশাপাশি শত্রু বিমানের গতিপথ ও অবস্থানও নির্ধারণ করতে পারেন।
রাফাল কি হারাতে পারবে এফ-৩৫ কে?
ফ্রান্সের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমানও যথেষ্ট আধুনিক এবং শক্তিশালী। এটি উন্নততর ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম এবং অত্যাধুনিক রাডার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে এফ-৩৫-এর মতো অদৃশ্য থাকার ক্ষমতা, এককভাবে বিশ্লেষণ ও যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়ার দক্ষতা রাফালের মধ্যে নেই। তাই সরাসরি তুলনায় রাফাল কিছু কিছু দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও, এফ-৩৫-কে পেছনে ফেলতে পারে না।
ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান ইউরোফাইটার বনাম এফ-৩৫
ইউরোপের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ইউরোফাইটার টাইফুন গতির দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে। বিশেষ করে এর চতুর্থ ও পঞ্চম সংস্করণে (যেগুলো উন্নতমানের) ইন্টারসেপ্ট এবং গতিবিদ্যাগত দিক থেকে এটি অত্যন্ত কার্যকর। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি ও স্পেনের বিমান বাহিনীতে এর সক্রিয় ব্যবহার রয়েছে। তবে তথ্য বিশ্লেষণ, রাডার প্রতিরোধ এবং স্টিলথ ক্ষমতায় এফ-৩৫ একক আধিপত্য বজায় রেখেছে।
এফ-৩৫ কি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান?
বর্তমানে এফ-৩৫ কে বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আকাশযুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি একাধারে আক্রমণ, নজরদারি এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধ পরিচালনায় সক্ষম। পাশাপাশি, রাডারে ধরা না পড়ার ক্ষমতা এটিকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, যুক্তরাজ্যসহ অনেক রাষ্ট্র এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে। এটি শুধু একটি যুদ্ধবিমান নয়, বরং একটি চলমান যুদ্ধঘাঁটি, যা একাই পুরো আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম।
আপনার মতামত লিখুন :