পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলার জবাবে ইসরায়েলে বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। ইসরায়েলকে নিশ্চিহ্ন করতে ‘ইমাদ, গাদ ও খাইবার শেকান নামের আধুনিক ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে তেহরান।
ইমাদ হচ্ছে গাদর ক্ষেপণাস্ত্রের আধুনিক ও নির্ভুল ওয়ারহেডযুক্ত সংস্করণ। এটি প্রবেশ করার পর দিক ও গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা লক্ষ্যবস্তুতে আরও নির্ভুল আঘাত হানতে সহায়তা করে। ২০১৫ সালের শেষ দিকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ১৫.৫ মিটার লম্বা ও ওজন প্রায় ১ হাজার ৭৫০ কেজিতে পৌঁছেছে। যা ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম।
গাদর হচ্ছে শাহাব-৩ ঘরানার মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যা ২০০৩ সাল থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি ২০০৫ সালে আধুনিকীকরণ করা হয়। গাদর রয়েছে তিনটি ধরনের—গাদর-এস, গাদর-এইচ ও গাদর-এফ। এগুলো ১ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার থেকে শুরু করে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। ওজন ও জ্বালানি ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এর নির্ভুলতা ও দূরত্ব বাড়ানো হয়েছে।
খাইবার শেকান, যা মধ্যপাল্লার ও উচ্চ নির্ভুলতা সম্পন্ন। এটি ১ হাজার ৪৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে। অ্যারো-৩ ও ডেভিড’স লিং-এর মতো আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অল্পতেই এড়াতে পারে। ঘন ঘন ব্যবহারের উপযুক্ত এই ক্ষেপণাস্ত্রটি কঠিন জ্বালানি ব্যবহারের কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত করা যায়।
এদিকে, শনিবার (১৪ জুন) রাতে ইসরায়েলে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ পুনরায় শুরু করেছে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন দিয়ে তেল আবিবের যুদ্ধবিমানের জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইরান।
এক বিবৃতিতে আইআরজিসির মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী মোহাম্মদ নায়েনি বলেন, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের জ্বালানি উৎপাদন সুবিধা এবং জ্বালানি সরবরাহ লাইনে বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান।
অভিযান পুনরায় শুরু হওয়ার পর প্রচারিত ছবিতে দেখা গেছে, ইরানি ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, বহু-স্তরীয় ইসরায়েলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এড়িয়ে সরাসরি আঘাত করছে। ইরানের লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল সামরিক ও গোয়েন্দা সুবিধা, শিল্প স্থাপনা, যুদ্ধবিমান উৎপাদন সুবিধা এবং তেল আবিব সরকারের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য কৌশলগত স্থাপনা।
এর আগে, শনিবার (১৪ জুন) জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে খামেনি বলেন, ‘ইসরায়েল বড় ভুল করে ফেলেছে, যার পরিণতি তাদের জীবন অন্ধকার করে দিতে পারে।’
কঠোর প্রতিশোধের বার্তা দিয়ে খামেনি বলেন, ‘ইরান এ হামলার জবাব হালকাভাবে দেবে না এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের প্রতি কোনো সহনশীলতা দেখাব না। কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এবং তা নেওয়া হবেই। আমাদের ইসলামী প্রজাতন্ত্র ও আল্লাহর অনুগ্রহে, ইহুদিবাদী সরকারকে আমরা পরাজিত করব ইনশাআল্লাহ।’
জাতীয় ঐক্যের বার্তা দিয়ে আয়াতুল্লাহ খামেনি দাবি করেন, পুরো ইরানি জাতি এবং সশস্ত্র বাহিনী এই প্রতিশোধে একাত্মতা গ্রহণ করবে। আমাদের সমগ্র জাতি সশস্ত্র বাহিনীর পেছনে রয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই আগ্রাসনের জবাব দেব।’