মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ০৯:২৪ পিএম

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘনঘটা

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ০৯:২৪ পিএম

গ্রাফিক্স : রূপালী বাংলাদেশ

গ্রাফিক্স : রূপালী বাংলাদেশ

সংঘাতে জর্জরিত পশ্চিম এশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্য। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক সংঘর্ষ। গত ১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক  অবকাঠামোয় হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল

জবাবে ইসরায়েলে লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। চার দিন পরেও যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। শান্তি আলোচনার প্রস্তাব উড়িয়ে দুই পক্ষই একে-অন্যকে শেষ পর্যন্ত দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘যদি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহর রাখে, তাহলে রাজধানী তেহরানকে জ্বালিয়ে ছারখার করে দেওয়া হবে।’ অন্যদিকে পাল্টা ইসরায়েলকে দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরানও।

ইরানের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ঢাল বানিয়ে হামলার অভিযোগ এনেছে ইসরায়েল। পাল্টা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে প্ররোচনা ছাড়াই হামলার অভিযোগ করেছে ইরান। সেখানেই থেমে থাকেনি খামেনি সরকার।

ইরানের সংবাদমাধ্যম অনুযায়ী, দেশটির সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, চলমান সংঘাতের রেশ ধরে কোনো রাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ালে সেই দেশকেও টার্গেট করবে ইরান। সেক্ষেত্রে ইসরায়েলকে সাহায্য করা দেশগুলোর সামরিক ঘাঁটি, পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগরে থাকা নৌবাহিনী ছাড় পাবে না বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কথা বলে আদতে ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ঠিক এই আবহেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা করছে ওয়াকিবহাল মহল।

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘনঘটা?

গত ১৩ জুন থেকে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক ঘাঁটিতে হামলা শুরু করেছিল ইসরায়েল। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’। ওই রাতে তাদের ২০০টি যুদ্ধবিমান অন্তত ১০০টি টার্গেটে হামলা চালিয়েছিল বলে দাবি করেছে ইসরায়েলির সেনাবাহিনী। পাল্টা ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলের হাইফা বন্দর, রাজধানী তেল আবিবে পরপর পড়েছে ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল।

মিরর-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাকিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি গ্লিসের মতে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ থেকেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে। নিজের দাবির পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, ইরান সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী ও ইসরায়েলের হামলার দ্রুত জবাব দিয়েছে তারা। সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ, হুথি এবং হামাসও রয়েছে তাদের সঙ্গে। এর ফলে এই যুদ্ধ আরও বিস্তৃতি লাভের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, এই যুদ্ধে আমেরিকার অবস্থানের দিকে নজর রাখছে রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া ও চীন। যদি আমেরিকা এখন ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাহলে প্রভাব বাড়াতে পারে ওই তিন দেশ। সেক্ষেত্রে ইউক্রেনে রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার উপর উত্তর কোরিয়া এবং তাইওয়ানের উপর চীন চাপ তৈরির চেষ্টা করতে পারে। সেক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে সংঘর্ষের আবহ তৈরি হতে পারে।

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পরেই আমেরিকা ইরাকের দূতাবাস থেকে তাদের কর্মীদের সরিয়ে নিয়েছে। ইচ্ছে করলে বাহরাইন, কুয়েত থেকেও দূতাবাসের কর্মীরা চলে যেতে পারেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গোটা পশ্চিম এশিয়ায় অশান্তি ছড়াতে পারে বলে মনে করছে খোদ যুক্তরাষ্ট্র, তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।

কানাডায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে যাওয়ার আগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ড ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। এই আবহেই পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধবিমান এবং আরও কিছু ‘অ্যাসেট’ মোতায়েন করেছে ব্রিটেন। যদিও তার সঙ্গেই সংঘর্ষ থামানোর বার্তাও দেওয়া হয়েছে ব্রিটেনের তরফে।

যুদ্ধে জড়াবে যুক্তরাষ্ট্র?

ইসরায়েলকে সরাসরি সমর্থন করেনি আমেরিকা। কিন্তু ইরানের হামলা থেকে ইসরায়েলকে বাঁচানোর জন্য কাজ করেছে মার্কিন নৌবাহিনীর প্রযুক্তি ও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। ইরানের সঙ্গে আমেরিকার পরমাণু সংক্রান্ত আলোচনা আপাতত স্থগিত রয়েছে।

এরই মধ্যে খামেনি সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমেরিকা যদি কোনোভাবে আক্রান্ত হয় তাহলে ইউএস আর্মি তার সম্পূর্ণ ক্ষমতা দেখাবে, যা আগে কখনও দেখায়নি।’

সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি  জানিয়েছে, এই বক্তব্য পেশের একদিন পরে সোমবার (১৬ জুন) ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হানায় সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসরায়েলে থাকা মার্কিন দূতাবাস। এই আবহে ওয়াশিংটন সরাসরি ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

ছবি- ইরানের প্রতিশোধ বিশ্লেষণ করা হয়েছে

যদি যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে অংশ নেয় তাহলে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কৌশলগতভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে থাকা রাশিয়াও চুপ করে বসে থাকবে না বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া কোনো যুদ্ধে জড়ালে তা আদতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধেরই নামান্তর বলে মনে করছেন তারা।

ইরান ও ইসরায়েল: চাপে দুই দেশই

ইসরায়েল ন্যাটোর সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ রাষ্ট্র। অন্যদিকে ইরানের সঙ্গে ইসরায়েল ও আমেরিকার সম্পর্ক বরাবরই তলানিতে। বরং আমেরিকা বিরোধী হওয়ার কারণে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে ইরানের। ইসরায়েলের হামলার বিরোধিতা করে মুসলিম বিশ্বকে একসঙ্গে বার্তা দেওয়ার ডাক দিয়েছে তুরস্ক ও পাকিস্তান।

তবে শিয়াপন্থী ইরানের সঙ্গে সুন্নিপন্থী ইসলাম ধর্মাবলম্বী দেশগুলোর সম্পর্কও মসৃণ নয়। এখন ইসরায়েলের হামলার কড়া জবাব না দিলে মুসলিম বিশ্বে দেশ হিসেবে দুর্বল প্রতিপন্ন হবে ইরান, তেমনটা হলে আমেরিকা-বিরোধী শক্তিগুলোর কাছে গুরুত্ব কমে যাবে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির।

অন্যদিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামলে আমেরিকা ও ইউরোপের কিছু দেশের বিরুদ্ধেও লড়তে হবে ইরানকে। কাঁটা রয়েছে ইসরায়েলের রাস্তাতেও। মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরেই যুদ্ধে ব্যস্ত ইসরায়েল। হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের কোণঠাসা করে রেখেছে তেল আবিব। কিন্তু ইরানের সামরিক শক্তি হামাস-হিজবুল্লাহ থেকে অনেকটাই বেশি।

কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময়ে বন্ধু-রাষ্ট্রের সমর্থন পাওয়া এক বিষয়। কিন্তু ইরানের মতো কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ালে সেখানে ইসরায়েল বন্ধু-রাষ্ট্রের সমর্থন সরাসরি পাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সমর্থন না পেলে, গোটা পশ্চিম এশিয়ায় একাই লড়তে হবে তাদের।

ফলে ইরান-ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব যদি লাগামছাড়া পর্যায়ে চলে যায়, দুই শিবিরের দেশগুলোর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Link copied!