ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫

হোয়াইট হাউজের ‘পা চাটবে না’ ইরান 

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম
আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি- সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের কূটনৈতিক মিশন। ইরানি আলোচকরা হোয়াইট হাউজে যেতে চান, ট্রাম্পের এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে তারা।

বুধবার (১৮ জুন) এক  প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে মিশনের এক পোস্টে বলা হয়, ‘কোনো ইরানি কর্মকর্তাকে পা চাটার জন্য হোয়াইট হাউজের দরজায় বসে থাকতে বলা হয়নি। ট্রাম্পের মিথ্যার চেয়েও ঘৃণ্য জিনিস হলো ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে উৎখাতের বিষয়ে তার কাপুরুষোচিত হুমকি।’

পোস্টটিতে বলা হয়েছে,  ‘ইরান জোর করে চাপিয়ে দেওয়া আলোচনায় অংশ নেবে না এবং যে কোনো হুমকির জবাব পাল্টা হুমকি দেবে, যে কোনো পদক্ষেপের জবাবে পাল্টা ব্যবস্থাও নেবে।’

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান যেন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাজ বন্ধ করে—এই মর্মে তাদের ‘চূড়ান্ত আল্টিমেটাম’ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এই ইস্যুতে তিনি একটি প্রস্তাবও দিয়েছেন। তবে ইরান যদি তাতে সাড়া না দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হস্তক্ষেপের পথেও যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ইরানে অভিযান চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছেন। সিএনএন-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে বলেছি, চালিয়ে যাও। আমি প্রতিদিনই তার সঙ্গে কথা বলি। তিনি একজন ভালো মানুষ, অনেক কিছু করেন।’

ট্রাম্প জানান, তাদের সর্বশেষ কথোপকথন হয়েছে গতকাল। তখন ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযান নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি ইঙ্গিত দেন, ইসরায়েলের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রও যোগ দিতে পারে।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান আইনি সমস্যার প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেন, ‘তার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে। তিনি একজন যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু তাকে এসব অর্থহীন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এটা হাস্যকর।’

তবে নেতানিয়াহুকে অতিরিক্ত কোনো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘না, এখন পর্যন্ত নয়। তিনি নিজের কাজ ভালোভাবেই করছেন।’

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করতে ইরানকে ‘চূড়ান্ত আল্টিমেটাম’ দেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরা এই রিপাবলিকান নেতা। এজন্য তিনি প্রস্তাবও দিয়েছেন। কারণ সংঘাতে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে বিবেচনা করছেন তিনি।

সত্যিই ইরানকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি চাই বলতে পারেন। হয়তো চূড়ান্ত বলতে পারেন, চূড়ান্ত আলটিমেটাম, তাই না?’ তবে এই আল্টিমেটাম আসলে কী- সে বিষয়ে বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে, ইরানে সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে তার নিজ দলের ভেতরেই ভিন্নমত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার কিছু সমর্থক এতে অসন্তুষ্ট, আবার অনেকে খুব খুশি। এমনও অনেকে আছেন, যারা ভাবতেই পারছেন না এটা হচ্ছে—তারা দারুণ খুশি।’

সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্প এখন তার দলের মধ্যকার ভিন্ন অবস্থান সামলাতে ব্যস্ত। অনেকেই ইরানে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে ট্রাম্প বলছেন, তার লক্ষ্য যুদ্ধ নয়—কিন্তু ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, ‘আমি এখন যুদ্ধের কথা ভাবছি না; না স্বল্পমেয়াদী, না দীর্ঘমেয়াদী। আমি ২০ বছর ধরে বলে আসছি, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারবে না।’

এর আগে, রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান টিম বার্চেট বলেছেন, তিনি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘খুব সামান্য’ ভূমিকা চান। তার কথায়, ‘মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের আরেকটি অন্তহীন যুদ্ধের দরকার নেই।’