শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম

এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত যেভাবে এগোচ্ছে

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম

ভারতে বিধ্বস্ত বিমান এয়ার ইন্ডিয়া এআই-১৭১ । ছবি - সংগৃহীত

ভারতে বিধ্বস্ত বিমান এয়ার ইন্ডিয়া এআই-১৭১ । ছবি - সংগৃহীত

ভারতের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে চলছে তদন্ত। এরই মধ্যে চিকিৎসকদের হোস্টেলের ছাদ থেকে ককপিট ভয়েস ও ফ্লাইট ডেটা রেকর্ড ঘেঁটে বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) এআই১৭১ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ বল্লভভাই প্যাটেল বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশ্যে ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল এবং কো-পাইলট ক্লাইভ কুন্দরের নেতৃত্বে যাত্রা শুরুর ৪০ সেকেন্ডেরও কম সময়ে বিজে মেডিকেল কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে ২৩০ জন যাত্রীসহ ১২ জন ক্রু অর্থাৎ মোট ২৪২ জন ছিলেন, যাদের মধ্যে রমেশ কুমার নামক একজন ছাড়া বাকিরা সবাই নিহত হন। শুধু বিমানেই নয়, মেডিকেল হোস্টেলেও ৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিধ্বস্ত হওয়ায় তদন্ত শুরু হয়েছে।

কী হয়েছিল?

আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়।

দুটি ইঞ্জিনই কি পাখির আঘাত বা জ্বালানির দূষণের কারণে বিকল হয়ে পড়েছিল? বিমানের ফ্ল্যাপগুলো কি অনুপযুক্তভাবে প্রসারিত হয়েছিল? ইঞ্জিন সার্ভিসিংয়ের সময় কোনো রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটি ছিল? নাকি অসাবধানতাবশত ক্রুদের কোনো পদক্ষেপে দুই ইঞ্জিনের জ্বালানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল?

তদন্তকারীরা এখন এসব সম্ভাবনা এবং আরও অনেক বিষয় খতিয়ে দেখছেন।

বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত ‘ট্রায়াঙ্গুলেশন অ্যান্ড অ্যাকশনের’ ওপর নির্ভর করে। রেকর্ড হওয়া বিমানের পারফরম্যান্স ডেটার সাথে ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া প্রমাণ মিলিয়ে দেখা হয়। সবকিছু একত্র করে তদন্তকারীরা ঘটনার একটি সুসংগত ছবি তৈরির চেষ্টা করেন, যাতে বোঝা যায় কোথায় সমস্যা হয়েছিল।

প্রতিটি পোড়া তার, ক্ষতিগ্রস্ত টারবাইন ব্লেড, বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের লগ (সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ), সিগন্যাল ও শব্দ, ফ্লাইট ডেটা এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ড—যাকে ব্ল্যাক বক্স বলা হয়—সবকিছু পরীক্ষা করে দেখা হবে।

এই তদন্ত কীভাবে এগোবে, তা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি।

কমপক্ষে তিনজন তদন্তকারী জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে প্রথম সূত্র পাওয়া যেতে পারে বিমানের দুটি ইঞ্জিনের ধ্বংসাবশেষ থেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের (এনটিএসবি) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিটার গোয়েলজ বলেন, ‘ক্ষতির পরিসর দেখে বোঝা যাবে, ঘটনার সময় ইঞ্জিনগুলো শক্তি উৎপাদন করছিল কি না। উচ্চ গতিতে ঘুরলে টারবাইনগুলো ভিন্নভাবে ভেঙে যায়।’

‘কি ভুল হয়েছিল, সেটা জানতে গেলে এটাই প্রথম ক্লু।’

টারবাইনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘূর্ণায়মান বস্তু যা থ্রাস্ট উৎপন্ন করতে শক্তি আহরণ করে।

মি. গোয়েলজ ব্যাখ্যা করেন, "যদি দেখা যায় ইঞ্জিনগুলো শক্তি উৎপাদন করেনি, তাহলে তা গুরুতর। সেক্ষেত্রে (তদন্তকারীদের) ফোকাস ককপিটের দিকে ঘুরবে।"

ঘটনার সময় ককপিটে কী ঘটেছিল, তা বোয়িং ৭৮৭-এর এনহ্যান্সড এয়ারবোর্ন ফ্লাইট রেকর্ডার্স (ইএএফআর) বা ব্ল্যাক বক্স থেকে জানা যাবে। (ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই রেকর্ডারগুলো দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।)

ফ্লাইট ডেটা এবং ককপিট অডিও রেকর্ড করে ওই যন্ত্র। সেখানে পাইলটের করা রেডিও কল থেকে শুরু করে ককপিটের ভেতরের শব্দও রেকর্ড হয়।

পাইলটের জন্য নির্ধারিত মাইক এবং রেডিও ট্রান্সমিশন থেকে ভয়েস রেকর্ডিং আসে। এছাড়া এরিয়া মাইক্রোফোন থাকে, যার মাধ্যমে ককপিটের ব্যাকগ্রাউন্ডের সমস্ত আওয়াজ পাওয়া যায়।

ডেটা রেকর্ডারগুলো নির্ভুলভাবে গিয়ার ও ফ্ল্যাপ লিভারগুলোর অবস্থান, থ্রাস্ট সেটিংস, ইঞ্জিন পারফরম্যান্স, জ্বালানি প্রবাহ এবং ফায়ার হ্যান্ডেল অ্যাক্টিভেশন ট্র্যাক করে।

‘যদি ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার থেকে জানা যায় যে ইঞ্জিন পুরোমাত্রায় শক্তি উৎপাদন করেছে, তাহলে ফ্ল্যাপ এবং স্ল্যাট নিয়ে ভাবতে হবে। যদি দেখা যায় সেগুলোও প্রয়োজন অনুযায়ীই প্রসারিত হয়েছিল, তাহলে তদন্ত অনেক কঠিন হয়ে পড়বে,’ বলেন মি. গোয়েলজ।

ফ্ল্যাপ এবং স্ল্যাট কম গতিবেগে বিমানকে লিফ্ট করতে এবং টেকঅফ ও ল্যান্ডিংয়ে সাহায্য করে। এছাড়া বিমান কম গতিবেগে থাকা অবস্থাতেও উড়তে সাহায্য করে।

‘যদি (তদন্ত) ফ্লাইট ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোল সিস্টেমে কোনো সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে, তবে তা শুধু বোয়িংয়ের জন্যই নয়, পুরো বিমান শিল্পের জন্যই গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করবে,’ বলেন মি. গোয়েলজ।

বোয়িং ৭৮৭-এর ফ্লাইট ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোল সিস্টেম একেবারে স্বয়ংক্রিয়। এটি বিমানের নেভিগেশন, পারফরম্যান্স এবং গাইডেন্সের দায়িত্বে থাকে। শুধু তাই নয়, এটি বিমানের পথ এবং জ্বালানি সংক্রান্ত দক্ষতা উন্নত করতে বিভিন্ন সেন্সর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে।

তদন্তকারীদের অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে, ঘটনার পেছনে কোনো পদ্ধতিগত সমস্যা ছিল কি না, না কি শুধু ওই বিমানেই কিছু সমস্যা ছিল। যদি পদ্ধতিগত সমস্যা থেকে থাকে, তবে তা বোয়িং-এর বিশ্বব্যাপী বহরকে প্রভাবিত করতে পারে।

‘যদি (তদন্ত) সিস্টেমগত সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে, তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে দ্রুত কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে,’ বলেন মি. গোয়েলজ।

এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষের দোষের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার জানানো হয়েছিল, সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ উড়োজাহাজের ৩৩টির মধ্যে ২৪টি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাতে বড় ধরনের কোনো নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ধরা পড়েনি। বিমান এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা নির্ধারিত মান অনুযায়ী চলছে।

বোয়িংয়ের প্রেসিডেন্ট ও সিইও কেলি অর্টবার্গ ১২ জুন বলেন, ‘জাতিসংঘের আইসিএও প্রোটোকল মেনে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১ সম্পর্কে তথ্যের জন্য বোয়িং ভারতের এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোকে (এএআইবি) সাহায্য করবে।’

দিল্লির এএআইবি ল্যাবে ডেটা ডিকোডিংয়ের নেতৃত্বে থাকা ভারতীয় তদন্তকারী দলের সঙ্গে থাকবেন বোয়িং, ইঞ্জিন প্রস্তুতকারী সংস্থা জিই, এয়ার ইন্ডিয়া এবং (ভারতীয়) নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তারা। এনটিএসবি এবং যুক্তরাজ্যের তদন্তকারীরাও থাকবেন।

মি. গোয়েলজ বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, (তদন্তকারী) দল মোটামুটি কী ঘটেছিল তা দ্রুত নির্ধারণ করতে পারবে, তবে কেন ঘটেছে তা বুঝতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।’

ধ্বংসাবশেষ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া যেতে পারে।

‘(বিধ্বস্ত বিমানের) নাট, বল্টুসহ প্রতিটি অংশ যত্নসহকারে সংগ্রহ করা হবে,’ বলেছেন মি. চিন্তা।

সাধারণত, বিমানের ধ্বংসাবশেষ নিকটবর্তী হ্যাঙ্গার বা সুরক্ষিত স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে বিমানের নাক, লেজ এবং ডানাগুলো শনাক্ত করার পর টুকরোগুলো একত্র করে দেখার চেষ্টা করা হয়।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে ফ্লাইট ডেটা এবং ভয়েস রেকর্ডার কী তথ্য দেয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। সেই তথ্যের ওপর নির্ভর করে হয়তো সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠনের প্রয়োজন নাও হতে পারে।

তদন্তকারীদের মতে, দুর্ঘটনার ওপর ভিত্তি করে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারিত হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তদন্তকারী বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ধ্বংসাবশেষের মধ্যে তদন্তকারীরা জ্বালানি ফিল্টার, লাইন, ভালভ এবং অবশিষ্ট জ্বালানি পরীক্ষা করে দেখবেন, যাতে সেখানে দূষণ ঘটেছিল কি না তা নির্ণয় করা যায়। এভাবে সম্ভাব্য কারণগুলো শনাক্ত বা বাতিল করা সহজ হবে।

ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, তার মতে যাত্রার আগে ব্যবহৃত রিফুয়েলিং সরঞ্জামগুলো ‘সম্ভবত পৃথকভাবে ইতোমধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে।’

তদন্তকারীরা বিমান সংস্থা এবং বোয়িংয়ের এসিএআরএস (এয়ারক্রাফট কমিউনিকেশনস অ্যাড্রেসিং অ্যান্ড রিপোর্টিং সিস্টেম) থেকে রক্ষণাবেক্ষণ এবং ত্রুটির ইতিহাস সংগ্রহ করবেন, যা রেডিও বা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বোয়িং এবং এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে পাঠানো হয়।

তারা সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ওই বিমান এবং ক্রুদের পরিচালিত সব ফ্লাইটের তথ্য পর্যালোচনা করবেন এবং পাইলটদের রিপোর্ট করা ত্রুটির প্রযুক্তিগত লগও খতিয়ে দেখবেন।

পাশাপাশি, ওই বিমান পরিষেবা দেওয়ার জন্য অনুমোদনের আগে নেওয়া সংশোধনমূলক পদক্ষেপও পর্যালোচনা করা হবে।

তদন্তকারীরা পাইলটদের লাইসেন্স, প্রশিক্ষণ রেকর্ড, সিমুলেটর পারফরম্যান্স এবং প্রশিক্ষকের মন্তব্যও পরীক্ষা করবেন। খতিয়ে দেখা হবে পাইলটরা অ্যাডভান্সড ফ্লাইট সিমুলেটরের মাধ্যমে ইঞ্জিন ব্যর্থতার মতো পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিয়েছিলেন।

‘আমার মনে হয়, এয়ার ইন্ডিয়া এরই মধ্যে এই নথিগুলো তদন্তকারী দলের কাছে সরবরাহ করেছে,’ বলেন মি. চিন্তা।

তদন্তকারীরা বিমানের সমস্ত উপাদানের পরিষেবার ইতিহাসও পর্যালোচনা করবেন- কী সরানো হয়েছিল, কোনটা প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হবে।

পাশাপাশি, পুনরাবৃত্ত কোনো সমস্যা ছিল কি না বা অন্য কোনো ত্রুটির ইঙ্গিত ছিল কি না যা ওই নির্দিষ্ট বিমানকে প্রভাবিত করতে পারে- এমন সব বিষয়ও খতিয়ে দেখা হবে।

‘এই তদন্তগুলো অত্যন্ত জটিল। এতে সময় লাগে। তবে কী ভুল হয়েছে, তার একটা প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে,’ বলেছেন মি. গোয়েলজ।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!