মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। ইরান ও তার মিত্র গোষ্ঠীগুলো প্রকাশ্যেই প্রতিশোধের হুমকি দিচ্ছে। ফলে গোটা অঞ্চলে মোতায়েন থাকা মার্কিন সেনারা রয়েছেন সর্বোচ্চ সতর্ক।
গত ১৯ জুন জেনেভায় জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আলী বাহরেনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘ওয়াশিংটন যদি আমাদের ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করে, তাহলে তেহরান আমেরিকার বিরুদ্ধে জবাব দেবে।’
মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও আমেরিকাকে ইরানের পাল্টা হামলা নিয়ে সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের পক্ষে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোতেই আঘাত হানার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
এ বিষয়ে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এরই মধ্যে জানিয়েছে, তারা মার্কিন বিমানঘাঁটিগুলোর উৎপত্তিস্থল শনাক্ত করেছে এবং সেগুলোর ওপর কড়া নজর রাখছে। তাদের বক্তব্য- ‘এই ঘাঁটিগুলো আমেরিকার শক্তির উৎস নয়; বরং দুর্বলতার স্থান।’
অন্যদিকে শনিবার (২১ জুন) ইয়েমেনের ইরানপন্থি হুথি গোষ্ঠী আমেরিকার বিরুদ্ধে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিলেও, রোববার তা প্রত্যাখান করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি
বর্তমানে কুয়েত, বাহরাইন, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থায়ী ঘাঁটিসহ মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ৪০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে আমেরিকার।
উল্লেখযোগ্য ঘাঁটিগুলো হলো
কুয়েতের ক্যাম্প বুহরিং ও আলী আল-সালেম বিমানঘাঁটি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে আল-ধাফরা বিমানঘাঁটি।
বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর, যেখানে প্রায় আট হাজার নৌসেনা কর্মরত।
কাতারে আল-উদেইদ বিমানঘাঁটি, যা মার্কিন কেন্দ্রীয় সামরিক সদরদপ্তর হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এখানে দশ হাজার পর্যন্ত সেনা অবস্থান করতে পারে।
পশ্চিম ইরাকের আল-আসাদ বিমানঘাঁটিও মার্কিন সেনার বড় ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, যা অতীতে একাধিকবার ইরানের টার্গেটে পরিণত হয়েছে।
ইতিহাস কী বলছে?
২০২০ সালে মার্কিন হামলায় জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর, ইরান ইরাকের আল-আসাদ ঘাঁটিতে ১৬টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর মধ্যে ১১টি সরাসরি ঘাঁটিতে আঘাত হানে এবং বহু মার্কিন সেনা আহত হন।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জর্ডানের সীমান্তবর্তী টাওয়ার ২২ নামক একটি ছোট মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিনজন মার্কিন সেনা নিহত হন।
এ ছাড়া ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইরানপন্থি গোষ্ঠীগুলো একাধিকবার ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইরাকের ইসলামিক প্রতিরোধ সংগঠন এবং কাতাইব হিজবুল্লাহ নামক মিলিশিয়া এ ধরনের হামলার জন্য দায়ী।
বর্তমান পরিস্থিতি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
ইরান ও তার প্রতিনিধিদের হুমকির কারণে বর্তমানে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে। কারণ অতীতে এ ধরনের হামলা হলেও এবারের পার্থক্য হচ্ছে- ইরানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর কিছুটা দুর্বল অবস্থা। ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর হিজবুল্লাহ ও হামাসের অনেক সক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে।
তবে ইরানের হাতে এখনো শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। যদিও বিমান বাহিনীর সক্ষমতা এখনো তুলনামূলক দুর্বল, কারণ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের বিমান প্রযুক্তি তেমন উন্নত হয়নি।
এদিকে বর্তমান উত্তেজনায় ইরাক ও ইসরায়েলে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসগুলোতেও সতর্কতা জারি করেছে আমেরিকা। সেখানে কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। কারণ এসব স্থাপনাও সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ জানিয়েছেন, ‘আমাদের বাহিনীকে সুরক্ষা দেয়াই এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার।’ এ জন্য আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত বাহিনীও মোতায়েন করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :