সূর্যের চেয়ে ৩৬০০ গুণ বেশি ভরের ব্ল্যাকহোল খুঁজে পেলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এটি এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে বড় ব্ল্যাকহোলগুলোর একটি এবং সম্ভবত সর্ববৃহৎ। ব্ল্যাকহোলটি অবস্থান করছে ‘কসমিক হর্সশু’ নামের একটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৫০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে।
‘কসমিক হর্সশু’ গ্যালাক্সিটির আকৃতি ও গঠন বেশ চমকপ্রদ। এর বিশাল ভর পেছনের আরও একটি দূরবর্তী গ্যালাক্সির আলো বাঁকিয়ে দেয়। যার ফলে সৃষ্টি হয় ‘আইনস্টাইন রিং’ নামের এক অপটিক্যাল ভ্রম। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই গ্যালাক্সিটির নামকরণ করা হয়েছে ‘হর্সশু’ বা ঘোড়ার খুরের আদলে।
এই ব্ল্যাকহোলের ভর নির্ণয়ের জন্য দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রথমটি হলো—গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং, যেখানে গ্যালাক্সির মহাকর্ষ শক্তি পেছনের আলোর পথ বাঁকিয়ে দেয়। দ্বিতীয়টি ‘স্টেলার কাইনেমেটিকস’, যার মাধ্যমে ব্ল্যাকহোলের আশপাশে থাকা নক্ষত্রগুলোর গতি বিশ্লেষণ করে ভর নির্ধারণ করা হয়।
গবেষকেরা বলছেন, এত বিশাল ব্ল্যাকহোল সাধারণত দেখা যায় ‘ফসিল গ্রুপ গ্যালাক্সিতে’, যেগুলো গঠিত হয় একাধিক গ্যালাক্সির সংঘর্ষ ও একীভবনের মাধ্যমে। কসমিক হর্সশু হচ্ছে তারকাময় একক গ্যালাক্সি, যার আশপাশের অন্যান্য গ্যালাক্সি হয়তো আগেই এর সঙ্গে মিশে গেছে।
এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথ (যুক্তরাজ্য) ও ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব রিও গ্রান্ডে ডু সুলের বিজ্ঞানীরা। তাদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘মান্থলি নোটিসিসেস অব দ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল সোসাইটি’ সাময়িকীতে।
ব্ল্যাকহোলটি বর্তমানে নিষ্ক্রিয় বা ডরম্যান্ট অবস্থায় রয়েছে—অর্থাৎ এটি এখন কোনো গ্যাস বা ধূলিকণা আকর্ষণ করছে না। আর এই অবস্থায় এত বড় ব্ল্যাকহোল শনাক্ত করা আরও বেশি চমকপ্রদ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণাটির অন্যতম গবেষক ও ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের অধ্যাপক থমাস কোলেট বলেন, ‘এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ১০টির মধ্যে সবচেয়ে ভারী ব্ল্যাকহোলের একটি এবং সম্ভবত সবচেয়ে ভারী। অধিকাংশ ব্ল্যাকহোলের ভর পরোক্ষভাবে নির্ধারণ করা হয়, তাই ভরের মান ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে আমাদের পদ্ধতিতে এই ব্ল্যাকহোলের ভর নিয়ে যথেষ্ট নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
গবেষণার প্রধান গবেষক ব্রাজিলের কার্লোস মেল বলেন, ‘এই আবিষ্কার এক নিষ্ক্রিয় ব্ল্যাকহোলকে ঘিরে, যা তখন কোনো উপাদান শোষণ করছিল না। শুধু এর বিশাল মহাকর্ষ বল এবং আশপাশে তার প্রভাব দেখেই আমরা একে শনাক্ত করতে পেরেছি।’
মেল আরও বলেন, তাদের ব্যবহৃত পদ্ধতি ভবিষ্যতে আরও অনেক লুকিয়ে থাকা ও অতিদৈত্য ব্ল্যাকহোল খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে, যেগুলো নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।
তাঁরা মনে করছেন, কসমিক হর্সশু গ্যালাক্সির এই ব্ল্যাকহোল গঠিত হয়েছে একাধিক গ্যালাক্সি ও তাদের কেন্দ্রস্থ ব্ল্যাকহোলগুলোর একীভবনের মাধ্যমে। অধ্যাপক কোলেট বলেন, ‘সম্ভবত এর আশপাশের গ্যালাক্সিগুলোর কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাকহোলগুলো একত্র হয়ে এই অতি দৈত্যকার ব্ল্যাকহোলটি গঠন করেছে। আমরা গ্যালাক্সি গঠনের চূড়ান্ত ধাপ ও ব্ল্যাকহোল বিকাশের শেষ পর্যায়টি দেখছি।’
গবেষক দলটি এখন ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার (ইএসএ)-র ‘ইউক্লিড’ টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া ডেটা ব্যবহার করে আরও লুকিয়ে থাকা ব্ল্যাকহোল খুঁজে বের করতে চায়। সেই সঙ্গে আরও জানতে চায়, কীভাবে এসব ব্ল্যাকহোল গ্যালাক্সির গঠন ও বিকাশকে প্রভাবিত করে।
আপনার মতামত লিখুন :