মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইলে কিংবা কাজের উদ্দেশ্যে আবেদন করলে আবেদনকারীর সকল কার্যকলাপ খতিয়ে দেখা হবে। এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার ও অনলাইন কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবার (ইউএসসিআইএস) মুখপাত্র ম্যাথিউ ট্র্যাজেসার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘যারা দেশকে ঘৃণা করে এবং আমেরিকা-বিরোধী মতাদর্শ প্রচার করে, তাদের আমেরিকার সুবিধা দেওয়া উচিত নয়।’
এই পদক্ষেপের কারণে ইতোমধ্যে অভিবাসন আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট অনেককে উদ্বিগ্ন হতে দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে এবং অনেকে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বেন।
ইউএসসিআইএস-এর নতুন নীতিগত আপডেটে বলা হয়েছে, অভিবাসন কর্মকর্তারা আবেদনকারীদের অতীত খতিয়ে দেখতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে তারা কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না, বিশেষ করে ইহুদি-বিরোধী কার্যকলাপে অংশ নিয়েছেন কি না অথবা আমেরিকা-বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন কি না তা যাচাই করা।
ইতোমধ্যেই জুন মাসে ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন স্ক্রিনিংয়ের অংশ হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া যাচাই প্রক্রিয়া চালু করেছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, এই যাচাই কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করা হবে। এখন কর্মকর্তারা আবেদনকারীদের অনলাইন কার্যকলাপ পর্যালোচনা করে আমেরিকা-বিরোধী মনোভাব শনাক্ত করার চেষ্টা করবেন।
অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, নতুন এ প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রবেশে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। তারা আশঙ্কা করছেন, কেবলমাত্র অনলাইন মন্তব্য বা রাজনৈতিক মত প্রকাশের ভিত্তিতেই অনেক আবেদনকারী ভিসা হারাতে পারেন।
এরই মধ্যে এর প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। সোমবার (১৮ আগস্ট) একজন কর্মকর্তা জানান, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই বছরই ৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল করেছে। একই সঙ্গে জুন মাসে পররাষ্ট্র দপ্তর নির্দেশনা জারি করে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোকে ছাত্র ভিসার আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আবেদনকারীদের আমেরিকান নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার, প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রতিষ্ঠাতা নীতির প্রতি শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
আইনজীবীদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ শুধু বিদেশি শিক্ষার্থী বা অভিবাসীদের জন্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ভাবমূর্তির জন্যও নেতিবাচক বার্তা বহন করতে পারে। তারা মনে করছেন, শিক্ষার্থী এবং দক্ষ অভিবাসীদের প্রবেশে বাধা দিলে দেশটির অর্থনীতি ও গবেষণা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বর্তমানে মার্কিন প্রশাসন ধারাবাহিকভাবে অভিবাসন নীতিকে কঠোর করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক নির্দেশনা সেই প্রক্রিয়ারই অংশ, যা বিদেশি নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পথে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি করবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন