কর ফাঁকির দায় মাথায় নিয়ে শুক্রবার পদত্যাগ করেছেন ব্রিটেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার। এর আগে এক তদন্তে উঠে আসে, সম্প্রতি একটি ফ্ল্যাট কেনার সময় তিনি সরকারের মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত নৈতিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলীয় শহর হোভ-এ এ বছরের গ্রীষ্মে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন রেইনার। বুধবার তিনি স্বীকার করেন যে, ওই ক্রয়ে তিনি যথাযথ কর পরিশোধ করেননি। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি সৎ বিশ্বাসে কাজ করেছেন, তবে শুরুতেই আরও স্পষ্টভাবে কর বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া উচিত ছিল।
রেইনার প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে লেখেন, ‘এই ভুলের পূর্ণ দায়ভার আমি নিচ্ছি। আমার উদ্দেশ্য কখনোই কর ফাঁকি দেওয়া ছিল না।’
স্টারমার তার প্রতিক্রিয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, রেইনার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি আপনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। রাজনীতিতে আপনার অর্জন অনন্য।’
মন্ত্রীদের নৈতিক মানদণ্ডবিষয়ক উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসের কাছে নিজেকে তদন্তের জন্য উপস্থাপন করেছিলেন রেইনার। শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে ম্যাগনাস বলেন, রেইনার সততা ও জনসেবার প্রতি দৃষ্টান্তমূলক অঙ্গীকার দেখিয়েছেন, তবে দুঃখজনকভাবে মন্ত্রিসভার আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন। রেইনার আরও জানান, গণমাধ্যমের চাপ তার পরিবারের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে।
যুক্তরাজ্যে বাড়ি কেনায় কর আরোপ করা হয়, যাকে স্ট্যাম্প ডিউটি বলা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, ৮ লাখ পাউন্ড মূল্যের ফ্ল্যাট কেনার সময় রেইনার প্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড কর ফাঁকি দিয়েছেন। তিনি ব্যাখ্যা দেন, তার ‘জটিল পারিবারিক পরিস্থিতি’, ২০২৩ সালের বিবাহবিচ্ছেদ ও প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসার কারণে সঠিকভাবে কর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
৪৫ বছর বয়সি রেইনারের কিশোরী বয়সে ট্রেড ইউনিয়ন নেতা এবং পরে এমপি ও উপ-প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠা ব্রিটিশ রাজনীতিতে বিরল ঘটনা। তার স্পষ্ট বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল, যেখানে স্টারমার তুলনামূলকভাবে কৌশলী আচরণের জন্য সমালোচিত হয়েছেন।
রেইনার লেবার পার্টির অন্যতম জনপ্রিয় নেতা ছিলেন এবং স্টারমারের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত হতেন। উপ-প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি তিনি দলীয় উপ-নেতার পদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন, ফলে লেবার পার্টিকে এখন নতুন উপ-নেতা বেছে নিতে হবে।
রেইনারের পদত্যাগের পর স্টারমার মন্ত্রিসভায় রদবদল শুরু করেছেন। তিনি আশা করছেন, এ ঘটনা ঘিরে চলা বিতর্কের ইতি টেনে সরকার এখন রাজনৈতিক এজেন্ডায় অগ্রসর হতে পারবে।
তবে ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই লেবার সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে। কল্যাণনীতি সংস্কার এবং বৈধ-অবৈধ অভিবাসন নিয়ে জনগণের উদ্বেগ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন