নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার পর এবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ পূর্ব তিমুরে সরকাবিরোধী বিক্ষোভের জন্ম নিয়েছে। গণবিক্ষোভের মুখে দেশটির সরকার সংসদ সদস্যদের (এমপি) জন্য নতুন গাড়ি কেনার পরিকল্পনা বাতিল করেছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, দীর্ঘদিনের উচ্চ বৈষম্য ও বেকারত্বের ক্রীড়নের মধ্যে এমপিদের বিলাসিতার খায়েশ তারা মানবেন না।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানী দিলিতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে টায়ার জ্বালিয়ে দেয় এবং একটি সরকারি গাড়িতে আগুন ধরায়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করলেও কয়েক ঘণ্টা পরই সরকার জনসংযোগের চাপের কাছে নতিস্বীকার করে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে গাড়ি কেনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভটি দ্রুত বিস্তৃত হয়ে আইন প্রণেতাদের আজীবন পেনশন বাতিলের দাবিতেও রূপ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বলেন, ‘কাজের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে চাওয়া আইন প্রণেতাদের প্রতি আমরা ক্ষুব্ধ, যখন সাধারণ মানুষ এখনো কঠিন জীবনযাপন করছে।’
২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, পূর্ব তিমুরের আইনপ্রণেতাদের বার্ষিক বেতন ৩৬ হাজার ডলার, যা দেশটির গড় আয়ের প্রায় ১০ গুণ। ২০০০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে আইনপ্রণেতাদের বিনামূল্যে গাড়ি প্রদানের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০০৮ সালে এমন একটি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকজন ছাত্র গ্রেপ্তার হন।
এই সপ্তাহে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছে। কারণ দেশটি উচ্চ বৈষম্য ও বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই করছে। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সেজারিও সিজার জানান, ‘মানুষের কাছে ভালো শিক্ষা, পানি ও স্যানিটেশনের সুযোগ নেই, তবু তারা নিজেদের সুবিধার জন্য এত আইন তৈরি করছে। এটা অন্যায়।’
সরকারি গাড়ি প্রদানের পরিকল্পনা বাতিলের পক্ষে সংসদে ৬৫ জন সদস্য সর্বসম্মতিক্রমে ভোট দিয়েছেন। তবে আজ বুধবারও কিছু বিক্ষোভকারী নীতি পরিবর্তনের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘গুজব রটেছে যে গাড়িগুলো ইতোমধ্যেই পথে নেমেছে। এ জন্য আমরা এখানে এসেছি যাতে করের টাকা ভুল পথে যাচ্ছে না তা নিশ্চিত করা যায়।’
পূর্ব তিমুরের রাজধানী দিলিতে বিক্ষোভগুলো শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। ফিদেলিস লেইতে মাগালহেস বলেন, ‘মানুষ এই ধারণায় অভ্যস্ত যে বিক্ষোভ একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ।’
এই আন্দোলন শুধুই পূর্ব তিমুরেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং নেপাল, ইন্দোনেশিয়ায়ও অভিজাত ও সরকারের বিরুদ্ধে তরুণরা রাস্তায় নেমেছিল। নেপালে জেন-জিদের বিক্ষোভে কয়েক ডজন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ায় পুলিশের পদক্ষেপে একজন মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু ঘটেছে। এভাবে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দুর্নীতি, বৈষম্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে জনগণের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন