ভূমিকম্পের সময় গতকাল শুক্রবার পুরান ঢাকার বংশালে ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম রাফি (২১) নিহত ও তার মা নুসরাত জাহান নিপা গুরুতর আহত হয়েছেন। মর্মান্তিক এ ঘটনায় ছেলের মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করে বারবার ভেঙে পড়ছেন মা নিপা।
মাংস কেনার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন মা–ছেলে। সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে কসাইটুলীর নয়নের মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকাকালে ভূমিকম্পে পাশের ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে। এতে দুজনই গুরুতর আহত হন। পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক রাফিকে মৃত ঘোষণা করেন।
মায়ের জানল ২৮ ঘণ্টা পর
অবস্থার অবনতি আশঙ্কায় রাফির মৃত্যুর খবর তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়নি নিপাকে। আজ শনিবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে, দুর্ঘটনার ২৮ ঘণ্টা পর তাকে মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মাঝে মাঝেই অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানান রাফির দূর সম্পর্কের মামা শাহরিয়ার মেহফুজ।
আজ ভোরে নিপাকে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। অন্য অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয় রাফির মরদেহ। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তারা বগুড়া পৌঁছান।
বগুড়ায় জানাজা ও দাফন
বাদ জোহর বগুড়া শহরের নামাজগড়ে রাফির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহপাঠী, স্বজন ও স্থানীয়রা অংশ নেন। পরে ছেলের মৃত্যুর খবর জানাতে নিপার কাছে গেলে তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে পরিবারের সদস্যরা নিজ নিজ বেদনার কথা স্মরণ করেন। চাচা মামুন মোর্শেদ টুলু ২০২০ সালে নিজের সন্তান হারানোর অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে নিপাকে সান্ত্বনা দেন।
ধাতস্থ হওয়ার পর নিপাকে শেষবারের মতো রাফির মুখ দেখতে দেওয়া হয়। বাদ আসর নামাজগড় কবরস্থানে রাফিকে দাফন করা হয়।
একই ঘটনায় আরও মৃত্যু
এই দুর্ঘটনায় একই স্থানে মাংস কিনতে আসা কাড় ব্যবসায়ী আবদুর রহিম (৪৫) ও তার ছেলে মেহরাব হোসেন রিমন (১১)–এরও মৃত্যু হয়।
পুরান ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভবনগুলোর ঝুঁকি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় থাকলেও অদৃষ্টের নির্মমতায় এক মুহূর্তের কম্পনেই নিভে গেল দুই পরিবারের স্বপ্ন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন