দুই বছরব্যাপী বিধ্বংসী যুদ্ধের পর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও দুর্ভিক্ষের ছায়া কাটছে না। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজার ৯৮.৫ শতাংশ কৃষিজমি ধ্বংস হয়েছে বা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গাজার বেশির ভাগ পরিবার এখন খাদ্যনির্ভর নয়, বরং সাহায্যনির্ভর জীবনে আটকে পড়েছে।
সবুজ থেকে মরুভূমি
গাজা উপত্যকার মাগাজি শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা ফিলিস্তিনি নাগরিক সালুল পরিবারের জমিও সেই ধ্বংসযজ্ঞের অংশ। ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক ও বুলডোজার তাদের পারিবারিক জমিতে প্রবেশ করে ৫৫টি জলপাই, ১০টি খেজুর ও পাঁচটি ডুমুর গাছ উপড়ে ফেলে দেয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, এটি শুধু গাছ ধ্বংস নয়- জীবিকা ও ইতিহাসের মূলোচ্ছেদ।
সালুল পরিবারের পূর্বপুরুষরা ১৯৪৮ সালের নাকবার সময় নিজেদের গ্রাম আল-মাগহার থেকে বিতাড়িত হন। গাজায় আশ্রয় নেওয়ার পর আলী আলসালুল নামে এক কৃষক ২০০০ বর্গমিটার জমি কিনে সেখানে জলপাই, খেজুর ও ডুমুর গাছ লাগান। বহু দশক ধরে এই জমিই ছিল পরিবারের জীবিকার উৎস।
পরিবারের বর্তমান সদস্যরা বলেন, ‘আমরা ১৯৪৮ সালে একবার জমি হারিয়েছিলাম, আর এখন ২০২৫ সালে আবার হারালাম। ইসরায়েল সেই ইতিহাস পুনরাবৃত্তি করল।’
যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই গাজায় কৃষিকাজ অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিমান হামলায় শত শত খামার ধ্বংস হয়। সালুল পরিবার ২০২৩ ও ২০২৪ সালে জলপাই সংগ্রহ করতে পারেনি।
গত আগস্টে ইসরায়েলি সেনারা মাগাজি শিবিরের পূর্বাংশে প্রবেশ করে শত শত গাছ উপড়ে ফেলে। এলাকাটি এখন বুলডোজারের ছোঁয়ায় ধূসর মরুভূমিতে পরিণত।
দুর্ভিক্ষের ফাঁদে
এফএও-র তথ্য অনুযায়ী, গাজার কৃষিজমি ধ্বংসের ফলে খাদ্য উৎপাদন প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ। অন্যদিকে, ইসরায়েল বাণিজ্যিক পণ্য প্রবেশে অনুমতি দিলেও মানবিক সাহায্য সীমিত রেখেছে।
গাজার স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ‘বাজারগুলো এখন হিব্রু ভাষায় মোড়ানো ইসরায়েলি পণ্যে ভরা, আমাদের নিজেদের খাবার উৎপাদনের ক্ষমতা ধ্বংস করে তারা আমাদের তাদের কাছ থেকে কিনতে বাধ্য করছে।’
গাজার ৯০ শতাংশ মানুষ এখন বেকার। একটি ইসরায়েলি ডিমের দাম ৫ ডলার এবং এক কেজি খেজুর ১৩ ডলার পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ফলে, লাখো মানুষকে বেছে নিতে হচ্ছে- ক্ষুধায় মারা যাওয়ার পথ।
বর্তমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে কিছু সাহায্য গাজায় পৌঁছালেও তা পরিস্থিতি বদলানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মতে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের সাহায্যনির্ভর করে তুলছে। তারা জানায়, ‘আমরা শুধু টিকে থাকতে চাই না- আমরা আমাদের জমি ফেরত চাই। আমাদের জমি পুনরুদ্ধার, পুনরায় চাষ ও রোপণ করা মানে শুধু খাদ্য নয়, আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা করা।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন