স্মার্টফোন ব্যবহার এখন দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু দিনের মাঝামাঝি ফোনের ব্যাটারি সতর্কতা দেখা দিলে বিরক্তি বাড়ে। অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের কাছে এটি একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। অনেকেই মনে করেন অ্যাপ বেশি থাকা বা সফটওয়্যার সমস্যা এর কারণ। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাটারি ড্রেনের মূল উৎস সাধারণত আমাদের অজান্তে করা কিছু ছোট্ট অভ্যাস। সামান্য কিছু পরিবর্তন- যেমন স্ক্রিন, কানেক্টিভিটি বা ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহারে নজর দিলে- প্রতিদিনই ফোনের ব্যাটারি কয়েক ঘণ্টা বেশি টিকে থাকতে পারে।
স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কম রাখা
স্মার্টফোনের ব্যাটারি খরচের সবচেয়ে বড় অংশই স্ক্রিন। অনেক ব্যবহারকারী প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ব্রাইটনেসে ফোন চালান, যা সারাদিন অযথা ব্যাটারি ক্ষয় করে। অ্যাডাপটিভ ব্রাইটনেস চালু থাকলেও ব্যবহারকারী যদি বারবার বাড়তি উজ্জ্বলতা ব্যবহার করেন, ফোন সেটিকে নতুন অভ্যাস হিসেবে ধরে ফেলে। তাই স্ক্রিন সর্বদা কম উজ্জ্বলতায় রাখা উচিত এবং প্রয়োজন হলে সাময়িকভাবে বাড়ানো যেতে পারে। এতে ব্যাটারি সাশ্রয় কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে।
পুরো ডিভাইসে ডার্ক মোড ব্যবহার
ওএলইডি বা অ্যামোলেড ডিসপ্লে থাকা ফোনে ডার্ক মোড ব্যাটারি বাঁচাতে অত্যন্ত কার্যকর। কারণ কালো রং প্রদর্শনের সময় এসব ডিসপ্লের পিক্সেল নিভে থাকে এবং শক্তি কম খরচ হয়। সিস্টেমজুড়ে ডার্ক মোড চালু করলে ব্যাটারি ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য কমতি আসে। পাশাপাশি কম আলোতে এটি চোখের জন্য আরামদায়ক হওয়ায় ব্রাইটনেস বাড়ানো লাগেনা, ফলে ব্যাটারি আরও টিকে থাকে।
স্ক্রিন টাইমআউট কমানো
অনেকের অভ্যাস হলো ফোন রেখে দিলেও স্ক্রিন লক না করা, এতে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ডিসপ্লে চালু থাকে এবং ব্যাটারি দ্রুত কমে যায়। তাই স্ক্রিন টাইমআউট ১৫ বা ৩০ সেকেন্ডে কমিয়ে নেওয়া ভালো। যারা পড়ার সময় স্ক্রিন বন্ধ হয়ে যাওয়াকে সমস্যার মনে করেন, তারা ‘ভিউ করার সময় স্ক্রিন অন’ ফিচার ব্যবহার করতে পারেন। এতে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে স্ক্রিন চালু থাকবে এবং অযথা জ্বলে থাকবে না।
কিবোর্ডের শব্দ ও ভাইব্রেশন বন্ধ রাখা
টাইপ করার সময় কিবোর্ডের প্রতিটি শব্দ বা হ্যাপটিক ফিডব্যাক ব্যাটারি খরচ করে। বিশেষ করে যারা মেসেজিং বা টাইপিং বেশি করেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যাটারির ওপর বড় প্রভাব ফেলে। কিবোর্ডের শব্দ ও ভাইব্রেশন বন্ধ করলে ব্যাটারি খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় এবং কয়েক দিনের মধ্যেই ব্যবহারকারী এ পরিবর্তনে অভ্যস্ত হয়ে যান।
অপ্রয়োজনীয় উইজেট সরিয়ে ফেলা
ফোনের হোমস্ক্রিনে থাকা উইজেটগুলো নিয়মিত রিফ্রেশ হয় ও নতুন তথ্য দেখায়, ফলে ব্যাকগ্রাউন্ডে শক্তি খরচ বেড়ে যায়। এক-দুইটি প্রয়োজনীয় উইজেট সমস্যা না করলেও অনেকগুলো উইজেট ব্যাটারি ড্রেন বাড়ায়। তাই যেসব উইজেট প্রতিদিন ব্যবহার করেন না, সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। এতে ফোন দ্রুতগতিও থাকবে এবং ব্যাটারি বেশি সময় টিকবে।
প্রয়োজন না হলে বন্ধ রাখা
ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ ও লোকেশন সার্ভিস সবসময় নেটওয়ার্ক, ডিভাইস বা অবস্থান স্ক্যান করতে থাকে। ফলে ব্যাটারির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। বিশেষ করে লোকেশন সার্ভিস সবসময় ব্যাকগ্রাউন্ডে অ্যাপগুলোর সঙ্গে কাজ করে বলে ব্যাটারি দ্রুত কমে। তাই প্রয়োজন ছাড়া এই ফিচারগুলো বন্ধ রাখা উচিত। এতে ফোনের চার্জ দীর্ঘসময় ধরে রাখা যায়।
করণীয়
উপরের সেটিংসগুলো ঠিক রাখার পরও যদি ফোনের ব্যাটারি দ্রুত কমে যায়, তাহলে সম্ভবত এটি সফটওয়্যার সমস্যা বা ব্যাটারির হার্ডওয়্যারজনিত ত্রুটি। এ অবস্থায় ফোন রিস্টার্ট করা, অ্যান্ড্রয়েড আপডেট চেক করা, অ্যাপ আপডেট করা বা সমস্যাযুক্ত অ্যাপ শনাক্ত করা জরুরি। সমস্যা স্থায়ী হলে ব্যাটারি পরীক্ষা করাতে হবে। পুরনো ব্যাটারি হলে পরিবর্তন করা বা বেশি ব্যাটারি ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ডিভাইস ব্যবহারের কথাও ভাবা যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন