শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৫, ১১:৫০ এএম

জাতিসংঘে তহবিল ঘাটতি, তীব্র হচ্ছে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৫, ১১:৫০ এএম

গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়। ছবি- সংগৃহীত

গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়। ছবি- সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে আবারও গভীর হচ্ছে খাদ্য সংকট। জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা সংস্থা ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, তহবিলের বড় ঘাটতির কারণে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ এখন চরম ক্ষুধার ঝুঁকিতে রয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে ডব্লিউএফপি জানায়, দাতাদের অর্থ সহায়তা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় এ বছর তাদের বাজেট ৪০ শতাংশ কমে ৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

সবচেয়ে বড় দাতা যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা কমিয়েছে, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিদেশি সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্তের অংশ। অন্য কয়েকটি বড় দাতা দেশও অনুদান হ্রাস করেছে। ডব্লিউএফপি সতর্ক করেছে, তহবিল কমে যাওয়ার ফলে আফগানিস্তান, কঙ্গো, হাইতি, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান ও সুদানে ১৩.৭ মিলিয়ন মানুষ সংকট থেকে ‘জরুরি’ পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারেন, যা দুর্ভিক্ষের ঠিক এক ধাপ আগে।

‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম’ জানিয়েছে, আফগানিস্তানে এখন সহায়তা পাচ্ছে প্রয়োজনীয় মানুষের ১০ শতাংশেরও কম। এদিকে সুদান ও গাজায় ইতিমধ্যে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। এই সংকটের মধ্যেই আগামী মাসে ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিত হবে কপ-৩০ জলবায়ু সম্মেলন, যেখানে খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যু গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, এশিয়ার শীর্ষ খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলো যেমন ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান- নিজেদের দেশেও ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছে। ভারতে এখনো প্রায় ১৭ কোটি ২০ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে আক্রান্ত, আর শিশুপুষ্টির অবস্থা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপগুলোর একটি। থাইল্যান্ডে, যা বিশ্বের অন্যতম বড় ধান রপ্তানিকারক, ৬০ লাখ মানুষ নিয়মিত না খেয়ে থাকে, আর প্রতি ১০ শিশুর একজন গুরুতর খাদ্য দারিদ্র্যে ভুগছে।
খাদ্যের দাম ক্রমেই বাড়ছে, মুদ্রাস্ফীতি সাধারণ মানুষের পাতে খাবার কমিয়ে দিচ্ছে। অনেক সময় খাদ্য রপ্তানি বেশি লাভজনক হওয়ায় উৎপাদকরা বিদেশি বাজারে বিক্রিকে অগ্রাধিকার দেন, ফলে দেশের বাজারে সরবরাহ কমে যায় ও দাম বেড়ে যায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) কর্মকর্তা পাত্রিজিয়া ফ্রাকাসি বলেন, ‘দারিদ্র্য ও বৈষম্য দেশে ক্ষুধা বাড়াচ্ছে। খাদ্যের দাম যত বাড়ছে, সমাজের দুর্বল শ্রেণি তত বেশি বিপদে পড়ছে।’


তিনি আরও বলেন, ‘এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জলবায়ু বিপর্যয় ও বাস্তুচ্যুত মানুষের চাপ। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও শরণার্থী সংকট খাদ্য পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে।’

ফ্রাকাসি বলেন, অনেক দেশ এখন পুষ্টিকর খাদ্যের পরিবর্তে ক্যাশ ক্রপ বা রপ্তানিযোগ্য ফসলের দিকে ঝুঁকছে, ফলে ফলমূল ও শাকসবজির মতো খাবার উৎপাদন কমছে। এসব খাবার পচনশীল ও কম ভর্তুকিযুক্ত হওয়ায় কৃষকেরা এগুলো উৎপাদনে উৎসাহ পাচ্ছেন না।  ‘কিন্তু ঠিক এই খাবারগুলোই পরিবারের পাতে থাকা দরকার, কারণ এগুলোই ‘গোপন ক্ষুধা’ বা লুকানো অপুষ্টি রোধ করে’ জানান তিনি । প্রসঙ্গত গোপন ক্ষুধা মানে হলো ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি, যেমন আয়রন, আয়োডিন বা জিঙ্কের অভাব—যদিও কেউ পর্যাপ্ত ক্যালরি পাচ্ছে বলে মনে হয়।

ফ্রাকাসির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ গোপন ক্ষুধায় ভুগছে। তিনি বলেন, ‘এই ক্ষুধা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, মানসিক বিকাশ ও কর্মক্ষমতার ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে।’

জাতিসংঘ বলছে, বৈশ্বিক খাদ্যব্যবস্থার সংকট কাটাতে এখনই দীর্ঘমেয়াদি নীতি, উন্মুক্ত বাজার ও কৃষকবান্ধব ব্যবস্থা প্রয়োজন। সংস্থাটির তথ্য বলছে, গত বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ২৩০ কোটি মানুষ- অর্থাৎ প্রতি চারজনের একজন- খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছে। ৫৩টি দেশ ও অঞ্চলে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, যা আগের বছরের চেয়েও বেশি। শুধু এশিয়াতেই ১১০ কোটি মানুষ পর্যাপ্ত, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য পায় না, কারণ তাদের আর্থিক বা শারীরিকভাবে খাবার কেনা সম্ভব নয়।

ফ্রাকাসি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ অনেক, তবে কিছু সফল উদাহরণও আছে, যেগুলো ছড়িয়ে দিতে হবে। শুধু নিয়ম নয়, দরকার এমন নীতি যা কৃষক ও ভোক্তা—দু’পক্ষকেই সুরক্ষা দেবে, যাতে পুষ্টিকর খাবার সবার জন্য সহজলভ্য হয়।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!