মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ০৩:০৮ পিএম

বিশ্লেষণ

কখনোই গাজায় ‘যুদ্ধবিরতি’ ছিল না, সব ভুয়া

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ০৩:০৮ পিএম

এআই দিয়ে ছবিটি বানানো।

এআই দিয়ে ছবিটি বানানো।

‘যুদ্ধবিরতি’ যে বয়ান শোনা যাচ্ছে, তা দেখতে যেমন শান্তির সূচক বলে দাবি করা হচ্ছে, বাস্তবে এসব তেমন কিছু নয়। বরং এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ- যা হত্যাকাণ্ড, বসতি সম্প্রসারণ এবং আধিপত্য বিস্তারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দীর্ঘমেয়াদি সব কুকর্ম ঢাকার পাঁয়তারা। গাজায় বিমান হামলা, সহায়তা বন্ধ রাখা, অস্পষ্টভাবে চিহ্নিত ‘নিরাপদ এলাকা’ ঘোষণা- এসব মিলিয়ে পরিষ্কার হয় যে, ঘোষিত যুদ্ধবিরতি আসলে মিথ্যা সব প্রতিশ্রুতি; বরং এটি হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার আরেকটি ফ্রেমওয়ার্ক।

একই পরিবারের একগুচ্ছ সদস্যকে ট্যাংক থেকে গুলি করে হত্যা, হাসপাতালের ওপর আক্রমণ, অবরুদ্ধ এলাকায় থাকা মৃতদেহের অনিশ্চয়তা এবং শনাক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধার অভাব। এসব ঘটনাই প্রমাণ করে যে সহিংসতা থেমে যায়নি- তা অন্যভাবে অন্য নামে হাজির হয়েছে।

‘হলুদ রেখা’ বা স্বঘোষিত সীমা নামে যেখানে কোন এলাকাকে নিরাপদ বা অরক্ষিত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তা যতক্ষণ না স্পষ্ট হয় তবে সেখানে  কীভাবে যুদ্ধবিরতি বলা যায়? এই অস্পষ্টতা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে; বিভ্রান্তি থেকেই আসে নির্যাতন চালানোর সহজ পথ।

এই আড়ালীর তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য লক্ষ করা যায়- প্রথমত, আন্তর্জাতিক জনমতকে শান্তির একটি ভান দেখিয়ে কিছু সময়ের জন্য চাপ কমানো; দ্বিতীয়ত, জনসংখ্যাকে দুর্বল করে তাদের স্থানান্তর ও সংকরায়ণ করা যাতে ভূ-রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা যায়; এবং তৃতীয়ত, অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযানের ঝুঁকি ও আন্তর্জাতিক তদন্তের চাপ সীমিত করা।

যুদ্ধবিরতির নামকরণে যে অনুপাতহীন সহিংসতা চালানো হচ্ছে, তা গোপনে একটি নতুন বাস্তবতা নির্মাণের চেষ্টা- যেখানে জনগণকে তাদের ভূমি ও জীবন থেকে ধীরে ধীরে বিচ্যুত করা হয়।

সহায়তা সীমিত রেখে বা অনিয়মিত করে রাখা- এটি সরাসরি সমষ্টিগত শাস্তির বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। জরুরি খাদ্য, ওষুধ এবং চিকিৎসা ব্যক্তিগত জীবন বাঁচানোর সর্বান্ত চেষ্টা। ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়া মৃতদেহ উদ্ধারে যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তা কেবল পরিচালনার পর্যায়ে নয়- মানবিক মর্যাদার দিক থেকেও হৃদয়বিদারক। ফেরত পাঠানো মৃতদেহগুলো’র অবস্থার বর্ণনা- হারমা, চোখ বাঁধা, নির্যাতনের চিহ্ন- এসবই ইঙ্গিত করে যে কেবল বাহ্যিক সংঘাত নয়; প্রাণনাশের এই পদ্ধতিগুলোতে নির্যাতন ও সম্মানহীনতা ও শামিল।

হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ বা অস্ত্র ত্যাগ করানো যদি প্রধান উদ্দেশ্য থাকে, তাহলেও যে শান্তি নিশ্চিত হবে- তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। ইতিহাস আমাদের শেখায় যে অস্ত্র তুলে দেয়ার পরে শূন্যতা সৃষ্টি হলে সেখানে স্থানীয় সামন্তবাদী বা অপরাধমুখী গোষ্ঠীর আবির্ভাব হতে পারে, যারা তখন গৃহযুদ্ধ, লুটপাট ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা বাড়ায়। নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্রবর্জনের বদলে প্রকৃত শান্তি আসে তখন- যখন নিশ্চিত করা হয় রাজনৈতিক অধিকার, নিরাপদ প্রত্যাবাসন, এবং দখল নীতির অবসান। অর্থাৎ, অস্ত্র ছেড়ে দিলে যে শান্তি আসবে- এটি কেবল একটি অংশ; মূল কাজ হলো রাজনৈতিক সমানাধিকার ও স্বাধীন সম্পত্তি ও নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠা করা।

একটু গভীরে দেখলে বোঝা যায়, একটি দুর্বলকৃত সমাজে সংঘাত-পরবর্তী পুনর্বিন্যাসে কেবল আর এক ধরনের দখলদারিত্বই জন্ম নেয়। ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ, স্থানীয় দখলদার গোষ্ঠীর উত্থান এবং সহায়তা সম্পদ লুটপাট- এসবই শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষের ওপরেই মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে। গাজায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে গৃহস্থ্যভাবেই নানা প্রতিযোগী গোষ্ঠী অস্তিত্বের জন্য লড়াই শুরু করবে, যা শান্তির পরিবর্তে দীর্ঘস্থায়ী অশান্তি সৃষ্টি করবে।

তবে আন্তর্জাতিকভাবেও কিছু জরুরি করণীয় আছে। যেমন-

১) স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্ত: পেশাগত, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের তদন্ত পরিচালিত হওয়া দরকার- ধ্বংসযজ্ঞ ও নির্যাতনের ঘটনাগুলোকে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে।,

২) মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশ: খাদ্য, মেডিকেল সরঞ্জাম ও চিকিৎসা কর্মীদের গাজার প্রতিটি প্রান্তে নদীর মতো প্রবাহ নিশ্চিত করা উচিত- এটি কেবল নীতিগত দাবি নয়, এটি জীবনের প্রয়োজন।

৩) আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বিচার: আন্তর্জাতিক আদালত ও স্বাধীন কমিশনগুলোর মাধ্যমে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত- তাদের বিচার করা অত্যন্ত জরুরি।

৪) দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সমাধান: কেবল সাময়িক শান্তি নয়; রাজনৈতিক অধিকার, নাগরিকত্ব, ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য স্থায়ী কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ফিলিস্তিনিরা ইতিহাসে বারবার প্রমাণ করে দিয়েছে যে, তারা দীর্ঘ দাসত্ব ও নিপীড়নে আত্মসমর্পণ করার মতো কোনো জাতি না। তাদের সংগ্রাম কেবল অস্ত্রের লড়াই নয়; এটি একটি জাতিগত ও নাগরিক মর্যাদার লড়াই। তাই নিরস্ত্রীকরণের নাম করে যদি শুধুমাত্র অস্ত্র সংগ্রহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু রাজনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি ও প্রত্যাবাসন না হয়, তাহলে সেই নিরস্ত্রীকরণ কখনোই মূল সমস্যার সমাধান আনবে না।

Link copied!