প্রযুক্তিখাতে নিত্যনতুন উদ্ভাবন দেখিয়ে বিশ্বকে তাক লাগাচ্ছে চীন। কৃষি থেকে শুরু করে আধুনিক সমরাস্ত্র কিংবা মহাকাশ গবেষণায় অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। এবার সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব প্রযুক্তিতে বিশ্বের সর্বোচ্চ তাপীয় লোডসহ বৃহত্তম ডাইভার্টর প্রোটোটাইপ উপাদান সফলভাবে তৈরি করেছে। অর্থাৎ পরবর্তী প্রজন্মের ‘কৃত্রিম সূর্য’ প্রযুক্তি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে চীন।
গত ১৩ অক্টোবর দেশটি ঘোষণা করেছে, ফিউশন শক্তি উন্নয়ন কর্মসূচির একটি মূল উপ-সিস্টেম বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনা ও গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষায় সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সিআরএএফটি বা ক্রাফট-এর ডাইভারটর প্রোটোটাইপ (ফিউশন প্রযুক্তির জন্য ব্যাপক গবেষণা সুবিধা) উপ-সিস্টেমটি চীনা একাডেমি অব সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব প্লাজমা ফিজিক্স তৈরি করেছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানায়, এটি ক্রাফটের ১৯টি মূল সাবসিস্টেমের একটি, যেখানে প্রকৌশলীরা ফিউশন রিঅ্যাক্টরের মূল উপাদানগুলো বিকাশ ও পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় দেখা গেছে, উপাদানটি প্রতি বর্গমিটারে ২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত স্থিতিশীল তাপীয় লোড সহ্য করতে পারে। এটি সম্ভব হয়েছে এর বিশেষ সমতল-প্লেট নকশার কারণে, যেখানে টাংস্টেন পৃষ্ঠের তাপমাত্রা পুনঃস্ফটিকীকরণ সীমার নিচে স্থিতিশীল থাকে।
ফিউশন রিঅ্যাক্টর কোরের স্থিতিশীল-অবস্থার ক্রিয়াকলাপের একটি মূল উপাদান হিসেবে ডাইভার্টর, ফিউশন পণ্য এবং তাপ নির্গমনের প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
ক্রাফট ডাইভার্টরের একটি বিশেষ উদ্ভাবন হলো এর সমন্বিত মিশ্র আবরণ নকশা, যা তাত্ত্বিকভাবে ট্রিটিয়াম প্রজনন অনুপাত ৩ শতাংশেরও বেশি বাড়াতে পারে। ফলে ফিউশন জ্বালানি ট্রিটিয়ামের স্বনির্ভর উৎপাদন সহজ হয়।
চীনা গবেষকরা বলেছেন, এই সাফল্য ডাইভার্টর গবেষণা ও উন্নয়নে দেশের পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রতীক। এটি ভবিষ্যতের দেশীয় ফিউশন রিঅ্যাক্টর নির্মাণে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তিগত ভিত্তি স্থাপন করেছে। এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা শুধু ফিউশন শক্তিতে সীমিত নয়, বরং ভবিষ্যতে মহাকাশ প্রযুক্তি, উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম, শিল্প ইলেকট্রনিক্স ও বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরিতেও প্রয়োগ করা যেতে পারে।
‘কৃত্রিম সূর্য’ প্রকল্পের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো সূর্যের মতো পারমাণবিক সংযোজন প্রক্রিয়া পুনর্নির্মাণ করা, যাতে মানবজাতি এক অক্ষয়, পরিবেশবান্ধব এবং সীমাহীন শক্তির উৎস পায়। যা একদিন সৌরজগতের বাইরেও মহাকাশ অভিযানে শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম হবে।
চীন ইতোমধ্যেই ফিউশন গবেষণায় বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করছে। এর এক্সপেরিমেন্টাল এডভান্সড সুপারকন্ডাক্টিং টকামাক (ইএএসটি) প্রকল্পটি একের পর এক বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে চলেছে এবং প্রতিটি ধাপেই মানবজাতির ‘অসীম শক্তির সূর্য’ স্বপ্নকে বাস্তবের আরও কাছে নিয়ে যাচ্ছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন