ইরাকের ২১ মিলিয়নের বেশি মানুষ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) নতুন সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশের আশা করা হচ্ছে। এই নির্বাচন ইরাকসহ পুরো অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একারণেই নির্বাচনে নিবিড়ভাবে নজর রাখছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র।
দীর্ঘ সময় ছায়া যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাওয়া ইরাকে সম্প্রতি স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরুর করেছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন হামলায় সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত পরবর্তী যুদ্ধাবস্থা দশক ধরে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে ইরাকিরা। কিন্তু দেশটির ৪৬ মিলিয়ন মানুষ এখনও দুর্বল অবকাঠামো, সরকারি ব্যর্থ পরিষেবা, দুর্নীতি ও পরিচালনাগত ত্রুটির শিকার হচ্ছে।
অনেকেই মনে করেন, নির্বাচন তাদের জীবনে কোনো বড় পরিবর্তন আনবে না। এই ভোট কেবল শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তি ও আঞ্চলিক শক্তির জন্য সুবিধা দেওয়া লোকদেখানো প্রক্রিয়া। নির্বাচনে নতুন মুখ দেখা যায়নি; আগের শিয়া, সুন্নি ও কুর্দ রাজনীতিকরাই নেতৃত্বে রয়েছেন।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি গভীর অসন্তোষের কারণে অনেকেই ভোট দেয়নি। নির্বাচন কমিশন এখনও ভোটার উপস্থিতির সঠিক সংখ্যা জানায়নি।
![]()
বয়কট
শিয়া ধর্মীয় প্রভাবশালী নেতা মোক্তাদা আল সদর নিজে ভোট দেননি। তিনি তার অনুসারীদেরও ভোট বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ কারণেও ভোটার উপস্থিতি কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরদ ক্ষমতাসীনদের ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ এবং সংস্কারের জন্য অযোগ্য বলে অভিযোগ করেছেন। তার এক ঘনিষ্ঠ সহচর বলেন, তিনি তার সমর্থকদের বাড়িতে থাকতে এবং ভোটের দিনকে ‘পরিবারের দিন’ হিসেবে পালনের পরামর্শ দিয়েছেন।
২০২১ সালে সদর সবচেয়ে বড় ব্লক জিতেছিলেন, কিন্তু শিয়া দলগুলোর সঙ্গে বিরোধের কারণে সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। এই বিরোধের জেরে বাগদাদে প্রাণঘাতী সংঘর্ষও হয়েছিল। মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের পর থেকে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠরা ইরাকে প্রভাবশালী।
এর আগে, দীর্ঘসময় ধরে তারা অবহেলিত ছিল। বেশিরভাগ শিয়া দলই প্রতিবেশি ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
ইরাকের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী পদটি শিয়াদের এবং সংসদের স্পিকার পদটি সুন্নিদের হাতে থাকে। রাষ্ট্রপতির পদ মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে কুর্দীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির ফের জয় পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি ২০২২ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন কো-অর্ডিনেশন ফ্রেমওয়ার্কের সমর্থনে। এটি শিয়া দল ও গোষ্ঠীর একটি শাসক জোট, যা ইরানের সঙ্গে যুক্ত।
কোনো একক দল বা জোটের সরাসরি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই জয় পেলেও ক্ষমতায় বসতে সুদানিকে যে কোনো জোটের সমর্থন পেতে হবে, যা সর্বাধিক বড় ব্লক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

যদিও শিয়া দলগুলো আলাদাভাবে ভোটে অংশ নিয়েছে, কিন্তু নির্বাচনের পর তারা একত্রিত হয়ে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবে।নির্বাচনী প্রচারে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতেও ইরাককে তুলনামূলক নিরাপদ রাখার সাফল্য তুলে ধরেন সুদানি।
সুষম ভারসাম্য
নতুন প্রধানমন্ত্রীকে ইরাকের মিত্র ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সুষম ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে বড় পরিবর্তন ঘটছে, নতুন জোট তৈরি হচ্ছে এবং পুরনো শক্তিগুলো দুর্বল হচ্ছে।
ইরাকের একমাত্র ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরানের প্রভাব কমলেও দেশটিতে নিজেদের শক্তি ধরে রাখতে চায়। ২০২৩ সালের পর ইরানের মিত্র লেবানন, ইয়েমেন ও গাজায় ইসরায়েল হামলা চালায়, কিন্তু ইরাক এখনও লক্ষ্যবস্তু থেকে বাইরে রয়েছে।
এদিকে ইরানের লক্ষ্য শক্তিশালী তেহরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করা এবং ইরাকের বাজারকে তাদের দুর্বল অর্থনীতির পণ্যের জন্য খোলা রাখা। অন্যদিকে ইরাকে এখনও ব্যাপক প্রভাবশালী যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সেনারা দেশটিতে মোতায়েন রয়েছে।
ওয়াশিংটন ইরানের প্রভাব বাধাগ্রস্থ করতে চায় এবং ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলিকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য বাগদাদকে চাপ দিচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ পরিবর্তনের আশা এবং নির্বাচন নিয়ে হতাশায় দ্বিধাবিভক্ত।
নির্বাচনে ৭,৭৪০-এর বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মাত্র ৭৫ জন। ভোটের বিধি বিধান বড় দলগুলোর সুবিধার জন্য প্রণয়ন করা বলেই অনেকের বিশ্বাস। সুন্নি দলগুলোও আলাদা আলাদাভাবে ভোটে অংশ নিচ্ছে। সাবেক স্পিকার মোহাম্মদ আল-হালবুসির জয়ের সম্ভাবনা রাখছেন।

স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলে কুর্দিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও প্যাট্রিয়টিক ইউনিয়ন অফ কুর্দিস্তানের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে ।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন