রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ০৯:১৮ এএম

ফের সংঘাতে জড়াচ্ছে ভারত-পাকিস্তান?

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ০৯:১৮ এএম

ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ছবি - সংগৃহীত

ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ছবি - সংগৃহীত

ভারত ও পাকিস্তানে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে ভয়াবহ দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে করে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমে নয়াদিল্লিতে গাড়ি বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত হন। এর পরদিন ইসলামাবাদের একটি আদালত ভবনের সামনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১২ জন নিহত ও আরও বহু মানুষ আহত হন। এই দুই হামলার পর দুই দেশই একে অপরকে পরোক্ষ–প্রত্যক্ষভাবে দায়ী করে নতুন রাজনৈতিক ও সামরিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

পাকিস্তানের অভিযোগ, ভারতের অস্বীকার

ইসলামাবাদের জেলা আদালত ভবনের পাশে পুলিশের গাড়ির কাছে ঘটে ভয়াবহ আত্মঘাতী বিস্ফোরণ। এতে অন্তত ১২ জন নিহত ও প্রায় ৩০ জন আহত হন। ঘটনাটির জন্য পাকিস্তান সরাসরি ভারতকে দায়ী করে বলেছে- এটি ভারতসমর্থিত উপাদান এবং আফগান তালেবানের কিছু অংশের যৌথ অপারেশন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ হামলাকে ‘ভারতের রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ’ বলে মন্তব্য করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, পাকিস্তান এখন ‘যুদ্ধাবস্থায়’ রয়েছে।

অন্যদিকে ভারত এসব অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। নয়াদিল্লির বক্তব্য- পাকিস্তান নিজের অভ্যন্তরীণ সংকট ঢাকতেই ভারতকে দোষারোপ করছে।

কঠোর অবস্থানে ভারত

নয়াদিল্লির লালকেল্লার কাছে একটি চলন্ত গাড়িতে বিস্ফোরণে ১০–১৩ জন নিহত হন। ভারত এটিকে পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা বলে ঘোষণা করেছে। হামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দেশটির জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএকে। সরকার কঠোর আইন প্রয়োগ করে সন্দেহভাজনদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা কেউ রেহাই পাবে না।’

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, হামলার পেছনের শক্তিকে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।

এদিকে ভারতীয় গোয়েন্দাদের ধারণা—হামলাকারীরা স্থানীয় হলেও পাকিস্তানভিত্তিক একটি গোষ্ঠী তাদের লজিস্টিক সহায়তা দিয়েছে।

আফগানিস্তান নিয়ে দ্বন্দ্ব

দিল্লি–ইসলামাবাদের উত্তেজনার আরেকটি কেন্দ্র আফগানিস্তান। ভারত সাম্প্রতিক সময়ে আফগান তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করেছে। তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকির দিল্লি সফর এবং উন্নয়ন সহযোগিতা- সব মিলিয়ে ভারত–আফগানিস্তান ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে।

অন্যদিকে আফগানিস্তান–পাকিস্তান সীমান্তে ডুর্যান্ড লাইনে উত্তেজনা, পারস্পরিক গোলাবর্ষণ ও অভিযোগ–পাল্টা অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, আফগান তালেবান টিটিপিকে আশ্রয় দিচ্ছে এবং টিটিপিকে ভারত সমর্থন করছে- যা ভারত সরাসরি অস্বীকার করেছে।

ইসলামাবাদের বিস্ফোরণের দায় টিটিপির একাংশ স্বীকার করলেও সংগঠনের অপর অংশ দাবি অস্বীকার করেছে, যা আঞ্চলিক পরিস্থিতিকে আরও অস্পষ্ট করেছে।

পুরোনো সংঘাত, নতুন রূপ

এ বছরের এপ্রিল মাসে ভারতের কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দিল্লি সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। এরপর ভারত শুরু করে ‘অপারেশন সিন্দুর’—যেখানে পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালানো হয়। চার দিনের এই সংঘাতে দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উত্তেজনা দেখা দেয়।

পাকিস্তান পাল্টা দাবি করে- ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। মে মাসে পাকিস্তান বেলুচিস্তানের সব সশস্ত্র সংগঠনকে ‘ভারতপন্থি প্রক্সি’ ঘোষণা করে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও তলানিতে ঠেলে দেয়।

গত মে মাসের এই উত্তেজনার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তার মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। পাকিস্তান এতটাই সন্তুষ্ট হয় যে ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়নের কথাও জানায়।

তবে ভারত তার ভূমিকা নাকচ করে বলে- এটি দিল্লির নিজস্ব সামরিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফল।

পাকিস্তানের নতুন রকেট ফোর্স

পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাতের পর ঘোষণা দিয়েছে- তারা একটি নতুন আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড গঠন করছে। এর লক্ষ্য প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে স্বাধীন সক্ষমতা অর্জন করা।

ভারতের নির্ভুল মিসাইল হামলার জবাবে কার্যকর প্রতিক্রিয়া দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পাকিস্তান এই নতুন বাহিনী তৈরি করছে। এতে তাদের প্রচলিত যুদ্ধক্ষমতা বাড়লেও আঞ্চলিক সংঘর্ষের মাত্রা আরও ভয়াবহ হতে পারে। গুরুতর হামলা হলে দুই দেশই গভীরপ্রবেশকারী মিসাইল ব্যবহার করতে পারে, যা মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।

সীমান্তে নজরদারি ও তথ্যযুদ্ধ

দুই রাজধানীর হামলার পর সীমান্তজুড়ে নজরদারি বৃদ্ধি পেয়েছে। কাশ্মীর সীমান্তে ড্রোন, সেন্সর ও রাডার ব্যবহার করে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। গণমাধ্যমে দুই দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও উসকে দেওয়া হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার বদলে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত: নতুন উদ্বেগ

ভারত ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করেছে। পাকিস্তানের দাবি- ভারতের এই পদক্ষেপে তাদের দিকের নদীগুলোতে পানির প্রবাহ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। পানিসম্পদের সংকট পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে।

ভারতের বক্তব্য- ছোট নদী–প্রকল্প করতে পাকিস্তানের অনুমতি প্রয়োজন হবে না, এবং এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের বাধা দেওয়ার সুযোগ কমিয়ে দেবে।

যুদ্ধের সম্ভাবনা কতটা?

পূর্ব অভিজ্ঞতা দেখায়- বালাকোট, উরি, কারগিল কিংবা সাম্প্রতিক পহেলগাম ও সিন্দুর অভিযানের মতো বড় উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত সীমিত পর্যায়েই থাকে। কারণ, পারমাণবিক ঝুঁকি উভয় দেশকেই শেষ মুহূর্তে সংযত করে। তবে এবারের পরিস্থিতি আঞ্চলিক রাজনীতি, আফগানিস্তান, টিটিপি, কাশ্মীর, জলবণ্টন ও মিসাইল প্রতিযোগিতার মতো বহু ইস্যুতে জটিল হয়ে উঠেছে। ফলে ঝুঁকি আগের চেয়ে বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

পুনর্মিলনের সম্ভাবনা কেন ক্ষীণ?

বিশ্লেষকদের মতে, ভারত–পাকিস্তানের বর্তমান সম্পর্কে পুনর্মিলনের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। মোদির নেতৃত্বে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কঠোর অবস্থানে আছে। পাকিস্তান আলোচনায় আগ্রহী হলেও সেনাবাহিনীর অবস্থান ভিন্ন। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে কোনো ছাড় দিতে পাকিস্তান প্রস্তুত নয়। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র–চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলছে।

নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের পরপর বিস্ফোরণের পর দুই দেশের সম্পর্ক আবারও তলানিতে নেমে এসেছে। রাজনৈতিক উত্তেজনা, সামরিক প্রস্তুতি, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও পারমাণবিক ঝুঁকি—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি দ্রুত জটিল হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক চাপ ও সংযত কূটনীতির মাধ্যমে এখনো বড় ধরনের যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

Link copied!