শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায়ের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আন্তর্জাতিক সংঘাত প্রতিরোধ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)। সংস্থাটির বাংলাদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক থমাস কিন এই রায় এবং এর সামগ্রিক প্রভাব নিয়ে একটি বিশদ বিশ্লেষণমূলক মন্তব্য প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে হাসিনার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
থমাস কিনের মতে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়টি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে স্বাগত হবে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য তার দায়বদ্ধতা নিয়ে জনসাধারণের মনে তেমন কোনো সন্দেহ নেই।
কিন তার মন্তব্যে উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের তদন্তে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে যে, সেই দমনপীড়নে প্রায় ১৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যা রাজনৈতিক নেতৃত্বের পূর্ণ জ্ঞান, সমন্বয় ও নির্দেশনার মাধ্যমেই ঘটেছিল। এই ঘটনায় শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিশেষভাবে অভিযুক্ত হয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনার কথোপকথনের রেকর্ড এবং সাবেক পুলিশপ্রধানের সাক্ষ্যসহ আরও বহু প্রমাণ উঠে এসেছে।
তবে বিচার প্রক্রিয়ার কিছু দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইসিজি। কিন বলেন, আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার সাধারণত বিতর্কের সৃষ্টি করে। এই ক্ষেত্রে দ্রুত শুনানি পরিচালনায় বিচারের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন মনে করেন, এই সমালোচনাগুলো বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জকে প্রতিফলিত করে। যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরও যথেষ্টভাবে মোকাবিলা করেনি।
এই রায়ের রাজনৈতিক তাৎপর্যকে ‘সুদূরপ্রসারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন থমাস কিন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ।
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানাবেন ততক্ষণ দলটির জন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে ফেরার পথ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম। সম্প্রতি ককটেল বিস্ফোরণ এবং আওয়ামী লীগের ডাকা দেশব্যাপী ‘শাটডাউন’-এর মতো ঘটনাগুলো দেশজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা আরও বাড়তে পারে। আইসিজি’র পরামর্শ, আওয়ামী লীগের উচিত সহিংসতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উচিত দলটির সমর্থকদের বিরুদ্ধে কঠোর দমন-পীড়ন এড়িয়ে যাওয়া।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন