শীতকাল এলেই আমাদের খাবার তালিকায় গরম খাবারের দাপট বেড়ে যায়। পিঠা, চা, স্যুপ কিংবা হট চকোলেট—এসবের চাহিদা সর্বোচ্চে। কিন্তু একই সময় আইসক্রিমের দোকানগুলোও খালি থাকে না। অসংখ্য মানুষ শীতের দিনেও নিশ্চিন্তে আইসক্রিম খায় এবং আরও বেশি উপভোগ করে।নিশ্চিন্তে আইসক্রিম খায় এবং আরও বেশি উপভোগ করে। তাই প্রশ্ন জাগে—শীতকালে বরফ কেন খাবো? এটা কি সত্যিই ক্ষতিকর? নাকি মিথের চেয়েও বেশি কিছু আছে?
বরফ খেলে গলা খারাপ হয়—মিথ নাকি সত্য?
বাংলাদেশি পরিবারগুলোতে মুখে একটি কথা খুব প্রচলিত—“বরফ খেলে গলা বসে যাবে!” চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি সবসময় সত্য নয়। বরফ বা ঠান্ডা খাবার সরাসরি গলার ইনফেকশন ঘটায় না। গলা ব্যথা সাধারণত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়, ঠান্ডা খাবারের কারণে নয়।
শরীরের তাপমাত্রা—ঠান্ডার মধ্যে ঠান্ডা খাওয়ার বিজ্ঞান
শীতে বরফ খাওয়া শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেবে—এ ভয়টাও পুরোপুরি সঠিক নয়। মানুষের শরীর একটি থার্মো-রেগুলেটরি সিস্টেমের ওপর চলে। যখন আপনি বরফ খান শরীর ভেতরে সামান্য ঠান্ডা অনুভব করে, তখনই শরীর বাড়তি তাপ উৎপাদন করে। ফলে আপনার অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এ কারণে বরফ খাওয়া শরীরের তাপমাত্রায় বড়সড় পরিবর্তন আনে না।
বরং অনেক ক্ষেত্রে ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঠান্ডা খাবার খেলে শরীর ভালোভাবে ভারসাম্য বজায় রাখে।
শীতের আবহাওয়ায় আইসক্রিমের স্বাদ কেন বাড়ে?
অনেকে বলেন, আইসক্রিমের আসল স্বাদ শীতেই পাওয়া যায়!
কারণগুলো হলো—
শীতের আবহাওয়ায় আইসক্রিম খুব দ্রুত গলে না। ফলে আস্তে আস্তে চেখে খাওয়া যায়, ফ্লেভার দীর্ঘস্থায়ী হয়।
ঠান্ডা আবহাওয়ায় মিষ্টি খাবারের স্বাদগ্রাহক কোষ আরও সংবেদনশীল হয়।
আইসক্রিমের দুধ, ক্রিম, চকোলেট বা ফলের ফ্লেভার আরও গভীর ও তীক্ষ্ণ মনে হয়।
আইসক্রিম শুধু খাবার নয়, অনুভূতি
শীতকালে অনেকেই মনমরা অনুভব করেন। দিন ছোট, রোদ কম, মন খারাপ বা অলসতা বেশি হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে—এ সময় মস্তিষ্কে ‘সেরোটোনিন’ হরমোনের মাত্রা কমে যায়।
আইসক্রিম কীভাবে সাহায্য করে?
আইসক্রিমের চিনি ও দুধ মস্তিষ্কে ডোপামিন ও এন্ডরফিন বাড়ায়। এগুলো মন ভালো করার রাসায়নিক।
ঠান্ডা খাবার খেলে অনেকের মধ্যে নস্টালজিয়া, শিশুসুলভ আনন্দও জাগে। যে কারণে এক কাপ আইসক্রিম হয়ে উঠতে পারে শীতের দিনের ‘মুড থেরাপি’।
শীতকাল: উৎসব, আড্ডা ও আইসক্রিমের যুগলবন্দি
শীত মানেই বিয়ে-শাদি, পার্টি, পিকনিক, রিইউনিয়ন, অফিস ট্যুর, বইমেলা—আনন্দের সময়। এসব অনুষ্ঠানে বরফ বা আইসক্রিম নেই—এ যেন কল্পনাই করা যায় না।
কেন উৎসবে বরফ জনপ্রিয়?
ভারী খাবারের পরে মিষ্টি–ঠান্ডা স্বস্তি দেয়। শিশু-কিশোরদের কাছে এটি বাড়তি আনন্দ। খাবারের টেবিলকে আরও উৎসবমুখর করে। শীতে পরিবেশ ঠান্ডা হওয়ায় আইসক্রিম দ্রুত গলে না— পরিবেশনেও সুবিধা। এ কারণে শীতের ভোজে আইসক্রিমের বিশেষ স্থান রয়েছে।
হজমের সমস্যা হয়?
অনেকে মনে করেন ঠান্ডা খাবার পেটে সমস্যা করে। এটি অর্ধেক সত্য, অর্ধেক ভুল। আইসক্রিম সাময়িকভাবে পেট ঠান্ডা করে। কিন্তু শরীর দ্রুত তা শরীরের তাপমাত্রায় এনে হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে। কোনো অ্যাসিডিটি, গ্যাস বা পেটের প্রদাহ না থাকলে বরফ খাওয়া সমস্যা তৈরি করে না। বরং অনেকে খাবারের পরে সামান্য ঠান্ডা কিছু খেলে হজমে আরাম বোধ করেন।
শীতে বরফ খাওয়ার উপকারিতা
যদিও বরফ স্বাস্থ্যকর খাবার নয়, তবুও এতে কিছু ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন থাকে (বিশেষ করে মিল্ক-বেইজড আইসক্রিমে)। অতিরিক্ত না খেলে এটি ক্ষতির চেয়ে আনন্দই বেশি দেয়।
যাদের শীতে বরফ খাওয়া উচিত না
সব খাবারের মতো এটিও সবার জন্য সমভাবে উপযোগী নয়।
যাদের এড়িয়ে চলা উচিত—
টনসিল বারবার ফুলে যায় এমন মানুষ।
ঠান্ডা অ্যালার্জি বা ঠান্ডা লাগলে শ্বাসকষ্ট হয় এমন রোগী।
নিউমোনিয়া বা তীব্র ইনফেকশনে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।
গলা অতিরিক্ত সংবেদনশীল যাদের।
ডায়াবেটিস রোগীদের (পরিমিত নিয়ন্ত্রণ ছাড়া)।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন