ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০৩৫ সাল থেকে নতুন পেট্রোল ও ডিজেলচালিত গাড়ি বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করার যে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা শিথিল হতে চলেছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রভাবশালী নেতা ম্যানফ্রেড ভেবারের ইঙ্গিত অনুযায়ী এই কড়া নিয়ম পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আগামী মঙ্গলবার (স্ট্রাসবুর্গে) ইউরোপীয় কমিশন এ বিষয়ে নতুন ঘোষণা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আগে নিয়ম ছিল, ২০৩৫ সালের পর বাজারে আসা সব নতুন গাড়িকে শতভাগ শূন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) নির্গমন করতে হবে। অর্থাৎ, পেট্রোল-ডিজেল গাড়ির পাশাপাশি সব ধরনের হাইব্রিড গাড়িও বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
নতুন নিয়মে যা হতে পারে
১০০% নিষেধাজ্ঞা নয়: ২০৩৫ সাল থেকে শতভাগ (১০০%) CO₂ নির্গমন কমানোর বদলে, তা ৯০% কমানো বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।
হাইব্রিড গাড়ি টিকে থাকবে: এর ফলে, প্লাগ-ইন হাইব্রিড গাড়িগুলো বাজারে টিকে থাকবে।
শক্তিশালী হাইব্রিড: বাজারে আসতে পারে নতুন প্রজন্মের এমন শক্তিশালী হাইব্রিড গাড়ি, যার ইলেকট্রিক রেঞ্জ ৬০০ কিলোমিটারের বেশি হবে এবং তাতে ব্যাকআপ ইঞ্জিন থাকবে।
কেন এই পরিবর্তন?
জার্মানির বিল্ড পত্রিকাকে ম্যানফ্রেড ভেবার জানিয়েছেন, দহনচালিত ইঞ্জিন (কম্বাশন ইঞ্জিন) পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার প্রযুক্তিগত বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তের পিছনে মূল কারণগুলো হলো
জনগণের অনীহা: ফক্সভাগেন, মেরসিডিজ-বেন্জ, বিএমডব্লিউ-এর মতো বড় গাড়ি নির্মাতারা বলছে, সাধারণ মানুষ প্রত্যাশিত হারে ইলেকট্রিক গাড়ি (EV) কিনছে না।
তাই হাইব্রিড গাড়ির মাধ্যমে পরিবর্তনের জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।
রাজনৈতিক চাপ: জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং ইউরোপের বড় গাড়ি কোম্পানিগুলো কয়েক মাস ধরে হাইব্রিড গাড়ির জন্য ছাড় দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল।
পরিবেশবাদীরা এই সিদ্ধান্তকে দেখছেন ইইউ’র ‘সবুজ নীতির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা’ হিসেবে। তাদের মতে, এটি হবে ‘গ্রিন ডিলকে’ দুর্বল করে দেওয়া।
অন্যদিকে, গাড়ি নির্মাতারা এবং এর সমর্থক দেশগুলো এটিকে ‘বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত’ হিসেবে দেখছে।
তবে ভলভো ও পোলস্টারের মতো কিছু গাড়ি নির্মাতা এই পরিবর্তনের বিরোধিতা করছে। তাদের আশঙ্কা, ২০৩৫ সালের লক্ষ্য পিছিয়ে দিলে চীনা ইভি নির্মাতারা ইউরোপে আরও শক্তিশালী হবে, কারণ তারা বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রযুক্তিতে ইতোমধ্যে বেশ এগিয়ে।



