ঢাকা শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫

লিবিয়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০৪:৫৯ পিএম
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ। ছবি- সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ বলেছেন, উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে লিবিয়াতেই অভিবাসীরা সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। সেখানে তারা পাচারকারী ও মিলিশিয়াদের হাতে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

সম্প্রতি মরক্কো সফরকালে দেশটির রাজধানী রাবাতে বার্তাসংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পোপ জানান, ভূমধ্যসাগরে যেসব অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে, তাদের অধিকাংশই লিবিয়া থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সমুদ্রপথটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং যারা এখনও যাত্রা শুরু করেনি, তারাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

অপহরণ, মুক্তিপণ ও নির্যাতন

আইওএম মহাপরিচালক বলেন, আমরা প্রায়ই অভিবাসীদের কাছ থেকে শুনি, তারা অপহৃত হয়েছেন, মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে, নির্যাতন ও হামলার শিকার হয়েছেন। আমি নিজেও অনেক অভিবাসীর কাছ থেকে সরাসরি শুনেছি, কীভাবে তারা সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে আটক হয়ে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতিত হয়েছেন। 

পোপ বলেন, পাচারকারীদের হাতে থাকা অভিবাসীদের জন্য লিবিয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক ও অনিশ্চিত জায়গা। এই অভিবাসীদের মধ্যে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকেও অনেকে রয়েছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর নীতি এবং সুদানের যুদ্ধের প্রভাব

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতির ফলে বর্তমানে অনেকে লিবিয়াতেই আটকা পড়ে আছেন। লিবিয়ার কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশটিতে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা ৪০ লাখ পর্যন্ত পৌঁছেছে।

২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহে সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে লিবিয়ায় অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, যা মানবপাচারকারীদের সক্রিয় হওয়ার সুযোগ দিয়েছে।

পোপ জানান, লিবিয়ায় আটকে থাকা অভিবাসীদের দুর্দশা নতুন না হলেও ২০২৩ সালে সুদানে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর তথ্যমতে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে সংঘাত শুরুর পর থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ ৫৭ হাজার সুদানি শরণার্থী লিবিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। আইওএম মহাপরিচালক বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন সুদানের যুদ্ধের মতো ঘটনাগুলো নিয়ে, যা বিপুলসংখ্যক মানুষকে বাস্তুচ্যুত করছে।

তিউনিসিয়া ও জাতিসংঘের অর্থায়ন সংকট

পোপ জানান, লিবিয়ার পাশাপাশি তিউনিসিয়াও অভিবাসীদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যাত্রাপথ। তবে ২০২৩ সালের ২৯০ মিলিয়ন ডলারের ইইউ চুক্তির পর সেখানে যাত্রা কিছুটা কমেছে। তবুও হাজার হাজার অভিবাসী, বিশেষ করে সাব-সাহারান আফ্রিকার লোকজন এখনো তিউনিসিয়ায় আটকা রয়েছেন।

দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, জাতিসংঘের অর্থায়ন কমে যাওয়ায় অভিবাসীদের সহায়তা দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। সহায়তা ও সেবার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এখন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে বলে আইওএম মহাপরিচালক জানান।