ঢাকা শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫

লাদাখ সীমান্তে চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, ভয়ে তটস্থ ভারত

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০৬:৫৭ পিএম
প্যাংগং লেকের পাশে চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি। ছবি- সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে যাওয়ার পর চীনের কাছে ধর্ণা দেয় ভারত। দীর্ঘ সাত বছর পর দেশটি সফরে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। লক্ষ্য বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন। এরপর দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে আবারও উন্নয়নশীল সম্পর্কে চির ধরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে লাদাখ সীমান্তে চীনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনে।

স্যাটেলাইট ছবিতে পূর্ব লাদাখের প্যাংগং লেকের তীরবর্তী এলাকায় চীনের পিপলস‌ লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ক্যাম্প, বাঙ্কার ও সুড়ঙ্গ নির্মাণের প্রমাণ মিললেও। এবার দেখা গেল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএসি) সেই এলাকায় রাডার বসিয়েছে চীন।

মজুত করছে ক্ষেপণাস্ত্রসহ নানা ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ! সীমান্ত ঘেঁষে চীনের এই সামরিক কর্মযজ্ঞ চরম উৎকণ্ঠায় ফেলেছে ভারত সরকারকে। বিশেষ করে পশ্চিমা মিত্র ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমশ বৈরী হওয়ার ক্রান্তিকালে সীমান্তে গলার কাঁটা হয়ে উঠছে চীন।

২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় এলএসি বরাবর (ফিঙ্গার এরিয়া-৮) ভারত ও চীনের সেনারা বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেখান থেকে এই ঘাঁটির দূরত্ব মাত্র ১১০ কিলোমিটার। বিশ্লেষকদের দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণস্থল ও বিশাল অস্ত্রাগার দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রস্তুতির অংশ বলেই মনে করছেন তারা।

ইন্ডিয়া টুডের ওএসআইএনটি শাখা ও মার্কিন-ভিত্তিক মহাকাশ গোয়েন্দা সংস্থা ভ্যান্টর থেকে পাওয়া স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, প্যাংগংয়ের তীরে নির্মাণাধীন ওই ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে রয়েছে কমান্ড সেন্টার, ব্যারাক, যানবাহন রাখার শেড, অস্ত্রাগার এবং রাডার স্থাপনাগুলো। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে সেই ঘাঁটির ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের স্থাপনাগুলো। সেগুলো এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যে, ছাদ সরিয়ে ট্রান্সপোর্টার-ইরেক্টর লঞ্চারযুক্ত যান ব্যবহার করে ক্ষেপণাস্ত্র দ্রুত চালিত ও উৎক্ষেপণযোগ্য। ওই যানগুলো দূরপাল্লার এইচকিউ-৯ সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম বহনে সক্ষম।

এইচকিউ-৯ চীনের অন্যতম প্রধান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বের হুমকি ধ্বংসে সক্ষম বলে ধরা হয়। ঘাঁটিটি বিশেষভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে আড়াল রেখে হঠাৎ হামলা চালানোর সুবিধার জন্য। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি প্যাংগং এলাকায় প্রথমবারের মতো দেখা যাচ্ছে; এর আগে একইরকম অবকাঠামো দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জগুলোতে লক্ষ্য করা গেছিল।

প্যাংগংয়ের তীরের এই ঘাঁটির প্রাথমিক নির্মাণের কাজ গত জুলাই মাসের শেষের দিকে স্যাটেলাইট ছবিতে ধরা পড়েছিল। এখনও এই বাঙ্কারের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। তোরজোড়ে এই ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি তৈরির কাজ চালাচ্ছে চীনের সেনারা। অবশ্য চীনের এই কার্যক্রমে কড়া নজর রেখে লাদাখে নিওমা বিমান ঘাঁটি তৈরি করেছে ভারত সরকার। ধারণা করা হচ্ছে, বিমান বাহিনীর এই ঘাঁটিকে নজরে রেখেই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ঘাঁটি তৈরি করছে চীন।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে চীন একদিকে তার সীমান্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করবে। অন্যদিকে ভারতেও নজরদারি বাড়াবে। প্রকাশ্যে আসা এই স্যাটেলাইট ছবিগুলো স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে চীন ও ভারত ক্রমশ একে অপরের বিরুদ্ধে বড় যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেছে।