যুক্তরাষ্ট্র যদি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে তুলে নেয়, তাহলে ইরান পারমাণবিক কর্মসূচিতে কঠোর সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে প্রস্তুত- এমন বার্তা দিলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আলী শামখানি।
বুধবার (১৪ মে) মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শামখানি বলেন, ‘অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে আমরা কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করব না। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করব এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের জন্য পারমাণবিক স্থাপনা খুলে দেব।’
এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে চতুর্থ দফায় পরমাণু ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি এই আলোচনা ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি ত্যাগের পর সবচেয়ে গঠনমূলক বলে বিবেচিত হচ্ছে।
পটভূমি: ২০১৫ সালের চুক্তি ও সংকটের শুরু
২০১৫ সালে ইরান ও ছয় বিশ্বশক্তির (P5+1) মধ্যে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তির (JCPOA) আওতায় ইরানকে ইউরেনিয়াম ৩.৬৭ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ করার শর্ত দেওয়া হয়েছিল, যাতে তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে।
কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বের হয়ে গেলে ইরান ধীরে ধীরে চুক্তির বাধ্যবাধকতা মানা থেকে সরে আসে।
বর্তমানে ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ মাত্রার অনেক কাছাকাছি।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, “ইরানই একমাত্র দেশ, যার কোনো পারমাণবিক অস্ত্র নেই, অথচ তারা এত উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে।”
ওয়াশিংটনের দাবি, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও তেহরান বারবার বলছে, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।
নিষেধাজ্ঞা ও দ্বৈত বার্তা
যুক্তরাষ্ট্র একদিকে আলোচনায় অংশ নিচ্ছে, অন্যদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও তেল খাত লক্ষ্য করে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। সর্বশেষ সোমবার (১৩ মে) একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, যা ইরানি তেল চীনে রপ্তানির একটি নেটওয়ার্ককে লক্ষ্য করে।
পরিণতি কী?
বিশ্লেষকেরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরানের পক্ষ থেকে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আলোচনার টেবিলে নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। তবে বিশ্বরাজনীতিতে আস্থা, কূটনৈতিক সুনীতি এবং পারস্পরিক স্বচ্ছতার অভাব সমঝোতার পথে বড় বাধা হয়ে থাকতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :