উত্তর কোরিয়া বছরের প্রথমার্ধে রাষ্ট্রীয় নীতির বাস্তবায়ন পর্যালোচনার জন্য গহীন পাহাড়ে এক গুরুত্বপূর্ণ দলীয় বৈঠক আয়োজন করেছে। মধ্যপ্রাচ্য যখন পারমাণবিক অস্ত্র ইস্যুতে ঠিক তখন এই ‘গোপন বৈঠক’ অনুষ্ঠিত হলো। তবে এতে দেশটির নেতা কিম জং-উন যে ভাষণ দিয়েছেন, তার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এই খবর জানিয়েছে।
কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানায়, গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টি অব কোরিয়ার (ডব্লিউপিকে) অষ্টম কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বাদশ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বছরের প্রথমার্ধে নেয়া নীতিগত কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং দ্বিতীয়ার্ধে করণীয় ঠিক করার জন্য আলোচনা হয়।
বৈঠকে কিম জং-উন ভাষণ দিলেও সেই বক্তব্যে দক্ষিণ কোরিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে কিছু বলেছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। সাধারণত উত্তর কোরিয়া এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের বক্তব্য প্রকাশ করে থাকে। তাই ভাষণের বিষয়বস্তু গোপন রাখা এবার এক বিরল পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার একীকরণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভাষণ গোপন রাখা এবং আলোচনায় কূটনৈতিক ইস্যু বাদ পড়াও অস্বাভাবিক।
বর্তমানে ওয়াশিংটন ও সিউলের পক্ষ থেকে উত্তর কোরিয়া নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। তাছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিও অস্থিতিশীল। এই প্রেক্ষাপটেই হয়তো পিয়ংইয়ং তাদের দলীয় বৈঠকের সব কিছু প্রকাশ করেনি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উক্ত সভায় উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক যুদ্ধজাহাজ দুর্ঘটনা নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি। মে মাসে চোংজিন বন্দরে একটি নতুন পাঁচ হাজার টনের ডেস্ট্রয়ার ডুবে যায় বা আংশিকভাবে ডুবে যায়। কিম তখন এ দুর্ঘটনার জন্য ‘সম্পূর্ণ অসাবধানতা’ ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’কে দায়ী করেছিলেন এবং সভার আগেই জাহাজটি উদ্ধার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মেরামতের পর রাজিন শিপইয়ার্ড থেকে জাহাজটি পুনরায় উৎক্ষেপণ করা হয়।
বৈঠকে আরও একটি বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে—দল সর্বসম্মতভাবে নবম কংগ্রেস আহ্বানের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এটি হবে ডব্লিউপিকে উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সর্বশেষ দলীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে কিম আধুনিক অস্ত্র তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এবার সম্ভবত বছরের শেষ দিকে বা আগামী বছরের শুরুতে নতুন কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এদিকে, অক্টোবরে দলটির ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সামনে রেখে কিম প্রশাসন দলীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একীকরণ মন্ত্রণালয়ের মতে, যুদ্ধজাহাজ দুর্ঘটনার বিষয়গুলো দ্রুত আড়াল করে তারা এখন দলের ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির দিকেই মনোযোগী।
দলীয় বৈঠকের প্রকাশিত ছবির ভিত্তিতে দক্ষিণ কোরিয়া জানায়, দলের সচিব রি হি-ইয়ংকে পলিটব্যুরোর প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, দলের অস্ত্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা রি পিয়ং-চোলকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর আরেক নেতা রি ইল-ওয়ানকে সভায় দেখা যায়নি, তাকে শাস্তি দেওয়া হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।