থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছে এবং উভয় দেশের হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছে। এ অবস্থায় থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, পরিস্থিতি যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে শুক্রবার এ খবর জানানো হয়েছে।
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী জানান, সংঘর্ষে এখন ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সংঘাত সীমান্তজুড়ে ১২টি স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে।
থাইল্যান্ডের অভিযোগ, কম্বোডিয়া বেসামরিক এলাকায় গোলাবর্ষণ করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রকেট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমন সব গ্রামবাসীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে প্রশাসন।
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার দাবি, থাইল্যান্ড যুদ্ধক্ষেত্রে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করছে। বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ এই ধরনের অস্ত্র বেসামরিক জনগণের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করে। তবে থাইল্যান্ড এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এই পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘সংঘাত মেটাতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই।’ যদিও আন্তর্জাতিক মহল যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
আসিয়ান (অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান ন্যাশনস)-এর চেয়ারম্যান ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘আমি ব্যাংকক ও নম পেন-এর কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে খুশি, তারা আলোচনার পথ খোলা রেখেছে।’
তবে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিকোর্নদেজ বলানকুরা রয়টার্সকে বলেন, ‘এখনো আমরা তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা প্রয়োজন মনে করছি না।’
এদিকে, উভয় দেশই মৃত্যুর সংখ্যা তুলে ধরেছে। থাইল্যান্ড জানিয়েছে, সংঘর্ষে তাদের ১৪ জন বেসামরিক নাগরিক ও ১ জন সৈনিক নিহত হয়েছেন। কম্বোডিয়ার ওদার মেনচি প্রদেশের কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রও ‘সংঘর্ষ বন্ধ এবং বেসামরিক জনগণের সুরক্ষা’ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র টমি পিগট বলেন, ‘সীমান্তবর্তী সহিংসতা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং বেসামরিক মানুষের ক্ষয়ক্ষতির খবরে শোকাহত।’
চীন জানিয়েছে, তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এবং এক্ষেত্রে উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। চীনের সাথে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া উভয় দেশেরই কূটনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক আছে।
এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ফ্রান্সও শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার এই সংঘাত নিয়ে বৈঠকে বসবে বলে জানা গেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এক চিঠিতে নিরাপত্তা পরিষদকে ‘থাইল্যান্ডের আগ্রাসন বন্ধে’ হস্তক্ষেপের অনুরোধ করেছেন।
উভয় দেশই বৃহস্পতিবার সংঘর্ষ শুরুর জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছে।
আপনার মতামত লিখুন :