ইন্দোনেশিয়ার গণতান্ত্রিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত বাসভবনে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ ঘটনার সূত্রপাত হয় এমপিদের ‘বিলাসী’ ভাতা নিয়ে দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভের পর। বিক্ষোভের মধ্যেই রাজধানী জাকার্তায় ২১ বছর বয়সি এক খাবার সরবরাহকর্মী সাঁজোয়া পুলিশের গাড়িচাপায় নিহত হন, এরপর সেই বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়। সরকারি হিসেব অনুযায়ী বিক্ষোভে অন্তত ৪৬০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশটির বিভিন্ন শহরে সহিংসতায় মোট সাত জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহান্তে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাট পার্টির সংসদ সদস্য আহমাদ সাহরোনির বাড়িতে ঢুকে লুটপাট চালায় জনতা। তারা দামি ঘড়ি, ডিজাইনার ব্যাগ ও গয়না নিয়ে যায়। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত এসব ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। দেখা যায়, তার বিলাসবহুল স্পোর্টস কার ধ্বংস করে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
সম্প্রতি সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি তোলা জনতাকে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা মানুষ’ বলে মন্তব্য করে অনলাইনে সমালোচনার মুখে পড়েন সাহরোনি। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন, তা এখনো অজানা।
এদিকে অর্থমন্ত্রী শ্রী মুলিয়ানির বাড়িও লুটপাটের শিকার হয়। তিনি ঘটনাটিকে ‘দুর্যোগ’ আখ্যা দিয়ে ইনস্টাগ্রামে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং বলেন, ‘আমরা আমাদের ভুলের জন্য দুঃখিত। ঈশ্বরের নামে, আমরা উন্নতির চেষ্টা চালিয়ে যাব।’ কর বাড়িয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির পরিকল্পনার কারণে তার বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়ছিল।
মানবাধিকার সংগঠন সেটারা ইনস্টিটিউটের বোনার টাইগর নাইপোসপোস বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসে প্রথমবার রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তাদের বাড়ি লুট হলো। ঘটনাগুলো পরিকল্পিত মনে হচ্ছে এবং বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এতে জড়িত থাকতে পারে।’
এ ছাড়া সংসদে নির্বাচিত কয়েকজন তারকা-রাজনীতিবিদের বাড়িও লুটপাটের শিকার হয়। অভিনেতা থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া উয়া কুয়্যার বাড়ি ভেঙে তার পোষা বিড়ালও চুরি করা হয়। সাবেক অভিনেত্রী নাফা উরবাখ ও কৌতুকশিল্পী একো হেন্ড্রো পুর্ণোমোর বাড়িও লুটপাটের শিকার হয়।
টানা সহিংসতার প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট প্রবোও সুবিয়ান্তো ঘোষণা দেন, এমপিদের বাসভাতা কমানো হবে এবং বিদেশ সফর স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। তবুও দেশজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।