ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দুবাইয়ের পথে ক্ষমতাচ্যুত কে পি শর্মা?

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম
বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। ছবি- সংগৃহীত

নেপালের জেন-জি’দের মাত্র দু’দিনের বিক্ষোভের মুখেই পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘রাজনৈতিক সমাধান এবং সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আজ থেকে কার্যকরভাবে আমি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করছি।’

তার পদত্যাগের আগে দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীরা শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও সোমবার পুলিশের গুলিতে ১৯ জন নিহতের পর বিক্ষোভ সহিংস আকার ধারণ করে।

এদিকে স্থানীয় সূত্র বলছে, কে পি শর্মা দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং দুবাই যাওয়ার পথে আছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়, পদত্যাগের আগে অলি সেনাপ্রধান জেনারেল সিগদেলকে পরিস্থিতি সামলানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেনাপ্রধান জানান, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেই সেনারা দেশকে স্থিতিশীল করতে সক্ষম হবে।

সংবাদমাধ্যম ফাস্টপোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কে পি শর্মা অলি দেশ ছাড়ার জন্য সেনাদের সহযোগিতা চেয়েছেন। চিকিৎসার অজুহাতে তিনি দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। হিমালয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান তার যাত্রার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এই গুঞ্জন আরও জোরদার হয় যখন ললিতপুরের ভৈসেপাটি এলাকায় সেনাবাহিনীর একাধিক হেলিকপ্টারকে উড্ডয়ন করতে দেখা যায়।

এদিকে অলির মন্ত্রিসভার সদস্যদের সেনা হেলিকপ্টারে করে বিমানবন্দরে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অন্তত পাঁচটি হেলিকপ্টার মন্ত্রীদের সরিয়ে নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে কাঠমান্ডু, ললিতপুর ও ভক্তপুরে কারফিউ জারি রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে সোমবার একযোগে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। ফেসবুক, ইউটিউব, এক্সসহ বেশ কিছু প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকেই জনরোষ আরও তীব্র হয়। তবে মানুষের মূল ক্ষোভ ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে।

বিষ্ণু থাপা ছেত্রী নামের এক শিক্ষার্থী বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, ‘দেশে ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে এসেছি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে তরুণদের জন্য আর দেশে থেকে যাওয়ার কোনো কারণ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দাবি দুর্নীতির অবসান, যাতে মানুষ দেশে কাজ করতে ও থাকতে পারে।’

বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন নিহত হন। পরে সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুঙ্গ জানান, ‘জেন-জিদের দাবি মেনে সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তবে মঙ্গলবার বিক্ষোভ আবারও ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, বিক্ষোভকারীরা কে পি শর্মা অলির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। কাঠমান্ডুতে শীর্ষ নেতাদের বাড়িঘরেও হামলার ঘটনা ঘটে। অগ্নিসংযোগের শিকার হয় নেপালি কংগ্রেস সভাপতি শেরবাহাদুর দেউবা, রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাউডেল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক এবং মাওবাদী নেতা পুষ্পকমল দাহালের বাড়ি।

বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনেও অগ্নিসংযোগ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, হাজারো মানুষ পতাকা উঁচিয়ে পার্লামেন্ট ভবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।