আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতে নারী রোগী, সেবিকা ও কর্মীদের হাসপাতালে প্রবেশের আগে বোরকা পরার নির্দেশ দিয়েছে তালেবান সরকার, অভিযোগ আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের (এমএসএফ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, গত ৫ নভেম্বর থেকে এ নির্দেশ কার্যকর হয়েছে। এমএসএফ জানিয়েছে, তালেবানের জারি করা এই নির্দেশনা নারীদের চিকিৎসা গ্রহণের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করেছে এবং জরুরি রোগী ভর্তি ২৮ শতাংশ কমে গেছে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এমএসএফের আফগানিস্তান বিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার সারা শাতো বিবিসিকে বলেন, ‘এই নতুন বিধিনিষেধ নারীদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে এবং স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা তৈরি করছে।’ তিনি বলেন, এমনকি জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন থাকা নারী রোগীরাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তবে তালেবান সরকারের এক মুখপাত্র এমএসএফের দাবি অস্বীকার করেছেন। যদিও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগের পর কিছু এলাকায় বিধিনিষেধ আংশিক শিথিল করা হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, হেরাত আঞ্চলিক হাসপাতালে তাদের শিশু চিকিৎসা ( পেডিয়াট্রিক ) বিভাগে নতুন নিয়ম চালুর পর জরুরি রোগী ভর্তি ২৮ শতাংশ কমে গেছে।
সারা শাতো বলেন, তালেবান সদস্যরা হাসপাতালে প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে বোরকা না পরা নারীদের ভেতরে যেতে বাধা দিচ্ছেন। বোরকা এক ধরনের পোশাক যা মুখ ও শরীর পুরোপুরি ঢেকে রাখে, শুধু চোখের সামনে জালের মতো পাতলা অংশ থাকে দেখার জন্য।
তালেবানের ‘নৈতিকতা ও পাপ প্রতিরোধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের’ মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম খাইবার দাবি করেন, ‘এ ধরনের খবর পুরোপুরি মিথ্যা। মন্ত্রণালয়ের অবস্থান সাধারণত হিজাব পরিধান নিয়ে, বোরকা নয়।’ তিনি বলেন, আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘হিজাবের ব্যাখ্যা ভিন্ন’ এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা শরিয়া আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অন্যদিকে মানবাধিকারকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, তালেবানের নিরাপত্তাকর্মীরা গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে প্রবেশকারী নারীদের বোরকা পরতে বাধ্য করছেন। এমনকি এটা শুধু হাসপাতালেই নয়— স্কুল, সরকারি দপ্তর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও তারা এই কাজ করছেন।
হেরাতের এক নারী অধিকারকর্মী বিবিসিকে বলেন, ‘হাসপাতাল, স্কুল কিংবা সরকারি অফিসে যেতে হলে এখন নারীদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এক আফগান কর্মী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ওই ভিডিওতে কিছু নারীকে বোরকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে। তবে ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
১৯৯০-এর দশকে প্রথম দফায় ক্ষমতায় থাকাকালীনও তালেবান নারীদের জন্য বোরকা বাধ্যতামূলক করেছিল। আর ২০২১ সালের আগস্টে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তারা নারীদের ওপর ধারাবাহিকভাবে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে চলেছে। ২০২২ সালে নারীদের জন্য সম্পূর্ণ মুখঢাকা পোশাক পরিধানের নির্দেশনা জারি করা হয়। যদিও সেসময় সেটিকে ‘পরামর্শ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল তালেবান।
তবে এমএসএফ জানায়, এবারই প্রথম হেরাতে এই নির্দেশ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। সারা শাতো বলেন, ‘গত কয়েক দিনে হাসপাতালে বোরকা পরা নারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।’
বর্তমানে নারীদের বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করেছে তালেবান। এছাড়া দেশটিতে মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষাও বন্ধ রয়েছে। জাতিসংঘ এই অবস্থাকে ‘লিঙ্গভিত্তিক বর্ণবৈষম্য’ হিসেবে বর্ণনা করে বারবার এর অবসান দাবি করেছে।

