ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কায় বন্যা-ভূমিধসে প্রাণহানি ১,৩০০ ছাড়াল

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে ভারি বর্ষণ, প্রবল বৃষ্টি এবং একটি বিরল ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের তাণ্ডবে ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ থাইল্যান্ডে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১,৩০০ ছাড়িয়েছে। অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বহু শহর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে। মঙ্গলবার পর্যন্ত শুধু বন্যা ও ভূমিধসের কারণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫৩ জন, যা সোমবারের ৬০৪ জনের তুলনায় অনেক বেশি। দুর্ঘটনা মোকাবিলা সংস্থা জানিয়েছে, এখনো ৫০৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানা যায়, ইন্দোনেশিয়ায় ৩.২ মিলিয়ন মানুষ বন্যার প্রভাবে বিপর্যস্ত, ২,৬০০ জন আহত হয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে এক মিলিয়ন মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। সুমাত্রার দূরবর্তী অংশে সড়ক যোগাযোগ সীমিত হওয়ায় সহায়তা পৌঁছানো দেরিতে হচ্ছে।

১৭ বছর বয়সি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুলের শিক্ষার্থী গাহিতসা জাহিরা চাহিয়ানি এক ভয়াবহ রাতের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমরা ভাবতেই পারিনি রাতটি আমরা বেঁচে থাকব কি না। পরিস্থিতি অত্যন্ত বিশৃঙ্খল ছিল। পানি খুব দ্রুত গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করেছিল। কোনো পূর্বসতর্কতা ছিল না।’

খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সংকট

এচে অঞ্চলের বাজারগুলোতে চাল, সবজি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী দ্রুত শেষ হয়ে আসছে এবং দাম তিন গুণে দাঁড়িয়েছে। ইসলামি রিলিফ সংস্থা দ্রুত ১২ টন জরুরি খাদ্য সামগ্রী পাঠাচ্ছে।

সংস্থার মুখপাত্র সতর্ক করে বলেছেন, পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে সরবরাহব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হলে এচের জনগণ মারাত্মক খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে পারে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইন্দোনেশিয়া সরকার সোমবার ঘোষণা করেছে, এচে, উত্তর সুমাত্রা ও পশ্চিম সুমাত্রায় ৩৪,০০০ টন চাল এবং ৬.৮ মিলিয়ন লিটার রান্নার তেল পাঠানো হচ্ছে।

শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের পরিস্থিতি

শ্রীলঙ্কায় 'ডিটওয়া' নামের সাইক্লোনের কারণে প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে ভূমিধস হয়েছে, যেখানে এখন পর্যন্ত ৪১০ জন নিহত এবং ৩৩৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়াকে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। যদিও বৃষ্টি কিছুটা কমেছে, তবুও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এখনো ভূমিধস সতর্কতা জারি রয়েছে।

অন্যদিকে, এই মৌসুমের মনসুনের সঙ্গে মালাক্কা প্রণালীতে একটি বিরল ট্রপিক্যাল স্টর্মের কারণে সৃষ্ট বন্যায় থাইল্যান্ডে ১৮১ জন নিহত হয়েছেন।

এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএচও) পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া দল এবং গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে। তারা রোগ নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইসুস এই মর্মান্তিক ঘটনাকে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত বলে উল্লেখ করেছেন।

টেড্রোস আধানম গেব্রেইসুস বলেন, এটি আরও একবার মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়ার ঘটনা আরও ঘন ঘন ঘটছে, যার ফলে বিপর্যয় ঘটে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান