ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫

আফ্রিকা কেন চীনের দিকে ঝুঁকছে? 

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৫, ১০:৫৬ এএম
ছবি- সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা প্রভাবের ছায়াতলে থাকা আফ্রিকা এখন দৃশ্যমানভাবে চীনের দিকে ঝুঁকছে। মহাদেশজুড়ে চীনা বিনিয়োগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং কূটনৈতিক আগ্রহ নতুন এক শক্তির বিকাশ ঘটিয়েছে। এই পরিবর্তন কি আফ্রিকার আত্মনির্ভরতার পথে অগ্রগতি, নাকি এটি নতুন এক ঋণনির্ভরতা ও নির্ভরতার ফাঁদ—তা নিয়ে  রয়েছে বিতর্ক।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, আফ্রিকার দেশগুলো এখন আর শুধু সাহায্যপ্রার্থী নয়, বরং তারা নিজেদের স্বার্থে নতুন বন্ধু খুঁজছে। আর চীন কৌশলগতভাবে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে চাচ্ছে।

চীনের আর্থিক বিনিয়োগ: উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি?

গত এক দশকে আফ্রিকায় ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে চীন। এর মধ্যে কেনিয়ায় বিলিয়ন ডলারের রেল প্রকল্প, ইথিওপিয়ায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন, জিবুতিতে নতুন গভীর সমুদ্র বন্দর উল্লেখযোগ্য। এই প্রকল্পগুলো চীনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে চীনা শ্রমিক দ্বারা নির্মিত।

চীনের হস্তক্ষেপহীন নীতি: রাজনৈতিক সুবিধা

আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব পশ্চিমা মানবাধিকার চাপে অস্বস্তিতে থাকে। চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার কৌশল তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। বিশেষ করে সুদান, জিম্বাবুয়ে, আঙ্গোলা ও ইথিওপিয়ার সরকার চীনের কাছ থেকে রাজনৈতিক সমর্থন ও অবকাঠামো সহায়তা পাচ্ছে, যা পশ্চিমা জোট থেকে পাওয়ার সুযোগ কম।

সহজ শর্তে ঋণ, কিন্তু শর্তের আড়ালে কি?

চীনের দেওয়া ঋণের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এগুলোতে রাজনৈতিক শর্ত নেই। অর্থাৎ, গণতন্ত্র বা মানবাধিকার মানার কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না। তবে অনেক সময় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে দেশগুলোকে বন্দর, খনিজ সম্পদ বা সরকারি প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর করতে হয়। জাম্বিয়া, শ্রীলঙ্কা বা জিবুতির অভিজ্ঞতা বলছে, বিষয়টি এক রকম ঋণ-নির্ভরতা ও নিয়ন্ত্রণের কৌশল।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই): আফ্রিকার সঙ্গে সংযুক্তি

চীনের বৈশ্বিক প্রকল্প বিআরআই আফ্রিকার কৌশলগত গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বন্দর, রেলপথ, মহাসড়ক এবং শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে চীন আফ্রিকার ৪০টির বেশি দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই সংযুক্তি একদিকে বাণিজ্য বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে আফ্রিকার বাজার চীনের জন্য নির্ভরযোগ্য রপ্তানি গন্তব্য হয়ে উঠছে।

কি বলছে পশ্চিমারা?

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ  চীনের এই কার্যক্রমকে নতুন  উপনিবেশবাদ বলে আখ্যা দিচ্ছে। তাদের মতে, চীন টাকা দিয়ে দেশগুলোকে ধীরে ধীরে নিজের বলয়ে আনছে। তবে আফ্রিকার নেতারা বলছেন, চীন অন্তত আমাদের উপদেশ দিতে আসে না তারা কাজ করে।