ঢাকা মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

ছেলের মুক্তির জন্য ৯০ বছর বয়সে আইন শিখছেন মা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ১০:২৮ এএম
আইন পড়ছেন বৃদ্ধা হে। ছবি- সংগৃহীত

হাতকড়া পরে আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ছেলেকে। স্বভাবতই কোনো মা সেই দৃশ্য দেখে স্বস্তিতে থাকতে পারবেন না। তার ব্যক্তিক্রম ঘটেনি ৯০ বছর বয়সি হে’র বেলাতেও। ছেলের অসহায়ত্ব দেখে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তবে উঠে দাঁড়িয়ে নিজেই ছেলেকে বাঁচাতে শুরু করেন আইনি লড়াই। আর এ জন্য তাকে শিখতে হচ্ছে আইনের সব জটিল বিষয়। রোববার সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে সেই মায়ের গল্প।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের ঝেজিয়াং প্রদেশের ঝোউশান শহরে স্থানীয় ধনকুবের হুয়াংকে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে ১১৭ মিলিয়ন ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৯৮ কোটি টাকা) আদায়ের অভিযোগ ওঠে ৫৭ বছর বয়সি লিনের বিরুদ্ধে।

অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, লিন ও হুয়াং একসঙ্গে গ্যাস উৎপাদন ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। তবে হুয়াং সময়মতো অর্থ পরিশোধ না করায় লিনের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন।

২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে লিন ও তার হিসাবরক্ষক হুয়াং-এর ব্যবসায়িক অনিয়ম ফাঁস করার হুমকি দিয়ে ওই অর্থ আদায় করেন। অবশেষে ২০২৩ সালের শুরুতে হুয়াং পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন এবং লিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, লিনকে হাতকড়া পরা অবস্থায় দেখেই আদালতের বাইরে কেঁদে ফেলেন তার বৃদ্ধা মা। এর কিছুক্ষণ পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। চিকিৎসকরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও তিনি বলেন, ‘আমি আমার ছেলের পাশে থাকতে চাই’।

কে জানত, এই পাশে থাকা মানে ছেলের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া! সাতপাঁচ না ভেবে তা-ই মনস্থির করেন হে। বয়স বিবেচনায় পরিবারের সদস্যরা তাকে নিরুৎসাহিত করলেও তিনি কারো কথা শোনেননি।

তার নাতনি জানান, দাদি খুব একগুঁয়ে। ফৌজদারি আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধি সম্পর্কিত বই কিনে নিজেই পড়াশোনা শুরু করেন। তিনি প্রতিদিন আদালতে যান এবং সংশ্লিষ্ট মামলার নথিপত্র ও আগের রায় বিশ্লেষণ করেন। আইনের বই, জার্নাল ও রায়পত্র পড়ে নিজেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জানা গেছে, মামলাটি এখন ঝোউশান মিউনিসিপ্যাল ইন্টারমিডিয়েট কোর্টে বিচারাধীন। সর্বশেষ শুনানি হয়েছে ৩০ জুলাই। হে’র এই অবিচল মানসিকতা ও মাতৃত্বের নজির সমাজে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। নেটিজেনরা তাকে ‘সাহসী মা’ এবং ‘মায়ের ভালোবাসার প্রতীক’ বলেও প্রশংসা করছেন।