ইরানের তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি, টার্মিনাল, কোম্পানি ও জাহাজের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ। নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে চীনের স্বাধীন তেল শোধনাগার, টার্মিনাল ও ভারতের শিপিং কোম্পানি।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের বরাতে এ তথ্য রয়টার্স জানিয়েছে। তেহরানের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎসকে লক্ষ্য করে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ইরানের জ্বালানি রপ্তানি নেটওয়ার্কে বড় আঘাত হানার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে চীনের শানডং জিনচেং পেট্রোকেমিক্যাল গ্রুপ কোং। শোধনাগারটি ২০২৩ সাল থেকে লাখ লাখ ব্যারেল ইরানি তেল কেনার অভিযোগে অভিযুক্ত। একইসঙ্গে রিঝাও শিহুয়া অপরিশোধিত তেল টার্মিনালের অপারেটরকেও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই টার্মিনালটি ইরানের তথাকথিত ‘ছায়া নৌবহর’ থেকে এক ডজনেরও বেশি জাহাজের চালান গ্রহণ করেছে।
ইরানের অর্থনীতির পেট্রোলিয়াম খাতে কাজ করার জন্য শিপিং কোম্পানি ভারত-ভিত্তিক ভেগা স্টার শিপ ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক সিনোপার শিপিং কোং, সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক অ্যাংলো প্রিমিয়ার শিপিং পিটিই লিমিটেড, লোগোস মেরিন পিটিই লিমিটেড, হংকং-ভিত্তিক গ্রেট টাইমস শিপিং লিমিটেড, ব্লু ওশান মেরিন কোম্পানি লিমিটেড, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক বার্থা শিপিং ইনকর্পোরেটেড উল্লেখযোগ্য।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই পদক্ষেপগুলোর লক্ষ্য ইরানের জ্বালানি রপ্তানি ব্যবস্থার মূল অবকাঠামো ভেঙে ফেলা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হলো তেহরানের রাজস্ব প্রবাহ কমিয়ে আনা এবং তাদের আন্তর্জাতিক লেনদেনের সক্ষমতাকে সীমিত করা।’
ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক ‘স্ন্যাপব্যাক’ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পর যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে নতুন চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে চীনভিত্তিক শোধনাগারগুলোর বিরুদ্ধে এটি যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ দফা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ।
নিষেধাজ্ঞার ফলে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে এবং মার্কিন নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের তাদের সঙ্গে যেকোনো লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ট্রেজারি বিভাগের ভাষ্যে, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতির অংশ, যার আওতায় ইতোমধ্যে শত শত ইরান-সম্পর্কিত সংস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ওয়াশিংটন বলছে, এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য তেহরানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তার ‘অবৈধ কর্মকাণ্ড’ বন্ধে বাধ্য করা। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞা ইরানের অর্থনীতিতে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেললেও, চীনা কোম্পানিগুলোর বিকল্প পথ খোঁজার প্রবণতা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলকে কঠিন করে তুলতে পারে।
তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাস ও জাতিসংঘে ইরানের মিশন মন্তব্য করেনি।