ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫

আন্তর্জাতিক ঋণ সতর্কতা জারি করেছে আইএমএফ

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম
আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। ছবি- সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী সরকারি ঋণ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতির মোট আকার ছাড়িয়ে যাবে। বুধবার (৮ অক্টোবর) এক বক্তৃতায় এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি এই প্রবণতাকে বিশ্বজুড়ে নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি ‘চিন্তাজনক বাস্তবতা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

সরকারি ঋণ বলতে সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারের মোট ঋণকে বোঝানো হয়। জর্জিয়েভা বলেন, রাজস্ব ঘাটতি, কোভিড-১৯ মহামারির উত্তরাধিকার এবং উন্নত ও উদীয়মান উভয় অর্থনীতির দেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান সুদের খরচ এই তিনটি কারণেই বিশ্বব্যাপী ঋণের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে।

আইএমএফের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচারিত এক বক্তৃতায় জর্জিয়েভা বলেন, ‘২০২৯ সালের মধ্যে বৈশ্বিক সরকারি ঋণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ঋণ বাড়তে থাকলে সুদের খরচ আরও বাড়বে। ফলে সুদের হার উচ্চ থাকবে, ব্যয় সংকুচিত হবে এবং বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোর ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়বে।

ওয়াশিংটনে মার্কিন ঋণের ক্রমবর্ধমান অবস্থার মধ্যেই জর্জিয়েভার এই সতর্কতা আসে। উচ্চ সুদের হার থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত ঘাটতি বাড়াচ্ছে। অক্টোবর পর্যন্ত দেশটির ঋণ রেকর্ড ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা মার্কিন জিডিপির প্রায় ১২৫ শতাংশ। বর্তমানে সুদ পরিশোধই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম ব্যয় খাতে পরিণত হয়েছে, এমনকি প্রতিরক্ষা ব্যয়কেও ছাড়িয়ে গেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বলছে, প্রবৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ কর্মসূচি চালাতে ঋণ নেওয়া অপরিহার্য। তবে সমালোচকদের মতে, এভাবে ঋণের বোঝা বাড়তে থাকলে দেশটি আর্থিক সংকটের ঝুঁকিতে পড়বে। এর আগে আইএমএফও সতর্ক করেছিল, অনিয়ন্ত্রিত ব্যয় বিশ্বব্যাপী ঋণগ্রহণের খরচ বাড়িয়ে তুলতে পারে ও উদীয়মান বাজারগুলোকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

জর্জিয়েভার এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়, যখন তিনি বিশ্ব অর্থনীতি নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার ভাষায়, ‘বিশ্ব অর্থনীতি আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে।’ তিনি বলেন, ভূরাজনৈতিক সংঘাত, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এবং জনসংখ্যাগত রূপান্তর, এই গভীর কাঠামোগত পরিবর্তনগুলো বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন অনিশ্চয়তার যুগ তৈরি করেছে, যা এখন ‘নতুন করে স্বাভাবিক’ হয়ে উঠছে।

জর্জিয়েভা আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা এখনো পুরোপুরি পরীক্ষিত হয়নি। কিন্তু এর কঠিন পরীক্ষা সামনে আসতে পারে এমন বেশ কিছু উদ্বেগজনক ইঙ্গিত ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে।’ তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন, বুধবার সোনার দাম প্রতি আউন্সে রেকর্ড ৪ হাজার ডলারে পৌঁছেছে এবং মার্কিন শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ২৫ বছর আগের ডটকম বুদ্বুদের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্ক নিয়েও তিনি সতর্ক করেন, ‘এর পূর্ণ প্রভাব এখনো প্রকাশ পায়নি।’

আইএমএফের জুলাই ২০২৫ সালের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ৩ দশমিক ১ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী পূর্বাভাসের চেয়ে সামান্য বেশি। তবে সংস্থাটি সতর্ক করেছে, যদি সরকারগুলো বাজেট ঘাটতি কমাতে ও আর্থিক সুরক্ষা বাফার পুনর্গঠনে উদ্যোগ না নেয়, তবে ঋণের চাপ, বাণিজ্য বিভাজন এবং স্ফীত সম্পদের দাম বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

জর্জিয়েভা জানান, আইএমএফ আগামী সপ্তাহে এই বিষয়ে নতুন আপডেট দেবে।

সূত্র: আরটি