ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবসে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে দেশটিকে সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেনের ৩৪তম স্বাধীনতা দিবসে সোভিয়েত শাসন থেকে মুক্ত ঘোষণার বার্ষিকীতে একটি চিঠিও পাঠান তিনি। তাতে ইউক্রেনের সাহসের প্রশংসা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের ভবিষ্যতে বিশ্বাস করে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির এক্স-এ চিঠিটি শেয়ার করেন। তিনি নিজের বার্তায় লেখেন, ‘আমরা হারব না।’
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। রোববার রুশ কর্মকর্তারা জানান, কুরস্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে একটি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করার পর আগুন লাগে। এতে একটি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রিটেনের রাজা চার্লস এবং পোপ লিও চতুর্দশসহ আরও বিশ্বনেতা শুভেচ্ছা বার্তা দেন। কিন্তু একই সময়ে শান্তি আলোচনা স্থবির হয়ে আছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ইউক্রেনে তার প্রথম সরকারি সফর করেন। তিনি এক্স-এ লেখেন, ‘কিয়েভের প্রতি আমাদের সমর্থন অটল। সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে আমরা প্রতিটি পদক্ষেপে আপনার সঙ্গে আছি।’
কিয়েভের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন ট্রাম্প প্রশাসনের রাশিয়া-ইউক্রেন দূত কিথ কেলগও।
কিছুদিন আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, পুতিনকে তিনি ‘কয়েক সপ্তাহ’ সময় দিচ্ছেন। এরপর মস্কোর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য পরিণতির সময়সীমা তিনি আরও বাড়ান। শান্তির আশায় পুতিনকে ইউক্রেনীয় নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসার আহ্বানও জানান।
চিঠিতে ট্রাম্প লেখেন, ‘ইউক্রেনের জনগণের মনোবল অটুট। আপনার সাহস অনেককে অনুপ্রাণিত করে। এই বিশেষ দিনে জেনে রাখুন, যুক্তরাষ্ট্র আপনার লড়াই ও ত্যাগকে সম্মান করে। আমরা একটি স্বাধীন ইউক্রেনের ভবিষ্যতে বিশ্বাস করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনই এই অর্থহীন হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র এমন আলোচনাকে সমর্থন করে, যা একটি টেকসই শান্তি আনবে। রক্তপাতের অবসান ঘটাবে এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষা করবে।’
জেলেনস্কি ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান। তিনি ইউক্রেনীয়দের উদ্দেশে বলেন, দেশটি আজ থেকে ১০০ বছর পরেও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে।
জেলেনস্কি বলেন, “ইউক্রেন আরও শক্তিশালী। আমাদের আত্মসম্মান আছে। আমরা সদিচ্ছার ইঙ্গিতের জন্য অপেক্ষা করি না, বরং যা দরকার তা-ই করি। আজকের ইউক্রেন আর কোনোদিন সেই লজ্জা সহ্য করবে না, যাকে রাশিয়ানরা ‘আপস’ বলে। আমাদের ন্যায্য শান্তি দরকার। আমাদের ভবিষ্যৎ আমরা নিজেরাই নির্ধারণ করব। আর বিশ্ব তা জানে।”
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেন এখনও পুরোপুরি জেতেনি, তবে হারবেও না। আমরা স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছি। আমরা শিকার নই, আমরা যোদ্ধা। আমরা ভিক্ষা করি না, আমরা জোট ও অংশীদারিত্ব অফার করি।’
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে রাশিয়া ইউক্রেনের দিকে ৭২টি ড্রোন ও একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানায়, এর বেশিরভাগই ভূপাতিত হয়েছে। আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠক হলেও কোনো সুনির্দিষ্ট চুক্তি হয়নি। এদিকে ভারী বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, রাতে তারা ৯৫টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে। কুরস্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছেও একটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়। এতে আগুন লাগে। তবে কর্মকর্তারা জানান, বিকিরণের মাত্রা পরিবর্তিত হয়নি। আর স্থানীয় অগ্নিনির্বাপক দল আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছে।