ঢাকা মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫

সংশোধিত শান্তি–পরিকল্পনাকে স্বাগত ইউক্রেনের, মস্কোর প্রত্যাখ্যান

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৯:৫০ এএম
ইউক্রেনের প্রতিনিধির সঙ্গে মার্কো রুবিও। ছবি- সংগৃহীত

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ২৮ দফা ‘বিতর্কিত’ শান্তি পরিকল্পনায় যে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে, তা স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পরিকল্পনার কয়েকটি অংশ রাশিয়ার উদ্দেশ্য বা স্বার্থ সমর্থন করে, এমন মনে হওয়ায় ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা সেগুলো বাতিল করে পরিকল্পনার একটি সংশোধিত সংস্করণ তৈরি করেছে।

বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যম টেলিগ্রামে জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘এখন যুদ্ধ শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর তালিকা বাস্তবসম্মত হয়ে উঠেছে…এ কাঠামোর মধ্যে অনেক সঠিক উপাদান যুক্ত করা হয়েছে।’

এখন যুদ্ধ শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর তালিকা বাস্তবসম্মত হয়ে উঠেছে…এ কাঠামোর মধ্যে অনেক সঠিক উপাদান যুক্ত করা হয়েছে।

- জেলেনস্কি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট

জেলেনস্কির এ বার্তা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর, মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ভোরে কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো জানান, রাশিয়ার একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় রাজধানীর একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে।

ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ও নিশ্চিত করেছে যে দেশের জ্বালানি অবকাঠামোতে ‘বড় ও সমন্বিত শত্রু হামলা’ চালানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনুকূল হলে জ্বালানি কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন ও মেরামত কাজ শুরু করবেন।’

গত অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা যে পরিকল্পনা খসড়া করেছিলেন, তা নিয়ে আলোচনা করতে গত রোববার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। এই পরিকল্পনা কিয়েভ ও এর ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছিল।

সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে রুশ প্রতিনিধিরা অংশ নেননি। এদিকে সোমবার ক্রেমলিনের একজন কর্মকর্তা এই সংশোধনগুলো ‘সম্পূর্ণ অগঠনমূলক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন।

মস্কোতে ক্রেমলিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউরোপের পরিকল্পনাটি প্রথম দেখাতেই…সম্পূর্ণ অগঠনমূলক। এটি আমাদের জন্য কার্যকর নয়।’

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট জোর দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টায় ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার পক্ষ নিচ্ছে না। ‘যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্র দুপক্ষের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করছে না—এ ধারণা পুরোপুরি ভুল’, সাংবাদিকদের বলেন লেভিট। লেভিট আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশাবাদী যে যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি পরিকল্পনা বের করা সম্ভব হবে।

ইতিমধ্যে, জেনেভার বৈঠক শেষে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে ইঙ্গিত দেন, হয়তো ভালো কিছু ঘটতে চলছে। তবে তিনি এ–ও বলেন, ‘না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাস করবেন না।’

জেনেভায় আলোচনার শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে অস্বীকার করতে হয় যে ট্রাম্পের সমর্থন করা ২৮ দফা পরিকল্পনাটি ক্রেমলিন লিখেছে—এ অভিযোগ সত্য নয়। কারণ, পরিকল্পনার কয়েকটি অংশে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের দাবির সঙ্গে মিল পাওয়া গিয়েছিল।

তবে সোমবার সন্ধ্যায় জেলেনস্কি বলেন, সংশোধিত পরিকল্পনা ‘নিশ্চয়ই সঠিক দিকনির্দেশনা’। তিনি আরও বলেন, ‘সংবেদনশীল বিষয়গুলো, সবচেয়ে সূক্ষ্ম দিকগুলো নিয়ে আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করব।’ তবে কখন করা হবে, তা তিনি জানাননি।

এর আগে ওই দিনই জেলেনস্কি বলেন, ‘মূল সমস্যা’ রয়ে গেছে। রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলগুলোকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার পুতিনের দাবিই এ সমস্যা।


জেলেনস্কির দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, গত শুক্রবার ফাঁস হওয়া ২৮ দফা পরিকল্পনাটি এখন আর আগের মতো নেই।

সপ্তাহান্তে জেনেভার বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন ইউক্রেনের ফার্স্ট উপ–পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই কিসলিতসা।  ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নতুন পরিকল্পনাটি এখন মাত্র ১৯ দফার। সবচেয়ে সংবেদনশীল রাজনৈতিক বিষয়গুলো—যেমন ভূমি ছাড় নিয়ে এখন শীর্ষ নেতারা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ঘোষণা দিয়েছেন, ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্রদের একটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ মঙ্গলবার (আজ) অনুষ্ঠিত হবে। পরিস্থিতির সাম্প্রতিক অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে সেখানে। স্টারমার আরও বলেন, ইউক্রেনে ‘ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি’ প্রতিষ্ঠার জন্য এখনো অনেক কাজ বাকি।

ইতিপূর্বে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ইউক্রেনের হাতে আগামী ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় আছে এ সমাধান মেনে নেওয়ার জন্য। না হলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারাতে পারে। তাঁর এ মন্তব্যে গত শুক্রবার ইউরোপজুড়ে এক ধরনের জরুরি পরিস্থিতি তৈরি করে এবং দ্রুতই ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে জেনেভায় বৈঠক ডাকা হয়।

পরে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি পাল্টা খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে। জানা গেছে, এ প্রস্তাবে ইউক্রনে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলোর কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বরং ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর অনুমোদিত আকার বাড়ানো হয়েছে এবং ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সুযোগও খোলা রাখা হয়েছে।

রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছে, ইউক্রেনকে পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে খালি করতে হবে। এর মধ্যে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক রয়েছে। এছাড়া ক্রিমিয়া ও আরও দুটি অঞ্চলের বিস্তীর্ণ অংশ—খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া নিয়ন্ত্রণে রেখেছে রাশিয়া।